চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরেছেন সাগরে নিখোঁজ ফিরোজ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে ফিরোজ সিকদার (২৯) নামের যে তরুণ নিখোঁজ হয়েছিলেন, তিনি ১১ দিন পর ভারতীয় প্রশাসনের সহায়তায় চেন্নাই থেকে ফিরে এসেছেন।
মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে বেনাপোল সীমান্ত হয়ে তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর থানায় এসে পৌঁছান। দিনভর পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় ফিরোজ সিকদারকে।
দুপুরে পটুয়াখালীর মহিপুর থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী সব ঘটনার বর্ণনা দেন ফিরোজ সিকদার। তিনি বলেন, ‘গত ২৭ মে দুপুর ১২টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে আমিসহ কয়েকজন বন্ধু সাগরে গোসল করতে নামি। একপর্যায়ে আমি ঢেউয়ের তোড়ে গভীর সমুদ্রে চলে যাই। কয়েক ঘণ্টা ভেসে থাকার পর একটি কলাগাছ পেয়ে সেটাকে আঁকড়ে ধরে ভাসতে থাকি। এর মধ্যে রাত হয়ে যায়। পরে ভারতীয় একটি মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা আমাকে উদ্ধার করে। রাতে আমাকে ট্রলারে খাবার দেওয়া হয়। পরে আমি ঘুমিয়ে যাই। পরের দিন সকালে ওই ট্রলারের জেলেরা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাঁদের ভাষা বুঝতে না পারায় আমি ইশারায় সব বোঝাতে চেষ্টা করি। জেলেরা এক দিন পর আমাকে নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তুলে দেন। ওই জাহাজটি আরও পাঁচ-ছয় দিন পর নির্ধারিত ঘাটে পৌঁছায়।’
জাহাজ থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের অফিসে নিয়ে যান জানিয়ে ফিরোজ সিকদার বলেন, ‘সেখানেই আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁরা হিন্দিতে কথা বলছিলেন। আমি হিন্দি বুঝি না। জানতে পারি আমি যেখানে আছি, সে জায়গাটির নাম চেন্নাই। পরে তাঁরাই আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। প্রথমে নৌবাহিনীর লোকেরা আমাকে কলকাতার বিমানে তুলে দেন। কলকাতায় নামার পর সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এক রাত ছিলাম। এরপর আমাকে টিকিট কেটে ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। আমি বেনাপোলে এসে পৌঁছাই। ট্রেনে ওঠার আগে আমাকে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়। ট্রেন বেনাপোল পৌঁছানোর পর একজন লোক আমাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতে বেনাপোল চেকপোস্টে নিয়ে যান। সেখানকার সব কাজ সম্পন্ন করে আমি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হই।’
তাঁর কাছে কোনো পাসপোর্ট–ভিসা ছিল না জানিয়ে ফিরোজ বলেন, সব ঘটনা জানার পর ওনারাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ফিরোজ সিকদারের ভাই মাসুদ সিকদার বলেন, ‘বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেনাপোল থানায়। ফিরোজের সঙ্গে সেখানে আমাদের দেখা হয় এবং তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
ফিরোজ সিকদার কীভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন, তা ইমিগ্রেশন পুলিশ ভালো বলতে পারবে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম কামাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন থেকে আমাকে বলা হয়েছে, একজন লোক পাঠাচ্ছি তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দেবেন। আমরা তাঁকে পাওয়ার পর তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তাঁর কাগজপত্র বা পাসপোর্ট ছিল কি না, সেটি আমাদের দেখতে বলা হয়নি। তা ছাড়া এসব বিষয় ইমিগ্রেশন পুলিশই দেখে থাকে।’
জানতে চাইলে মহিপুর থানার ওসি খন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘গতকাল বেলা পৌনে তিনটায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ফিরোজ। এরপর বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন পরিদর্শক আমাকে কল করে নিখোঁজ ফিরোজ সম্পর্কে জানতে চান। আমি তাঁকে বিস্তারিত খুলে বলি। এরপর বেনাপোল পুলিশ তাঁকে বন্দর থানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে আজ ভোর চারটার দিকে মহিপুর থানায় পৌঁছান।’
পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাঁকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আবুল খায়ের।