ছোট–মাঝারি গরুর দাম ও বিক্রি—দুই–ই বেশি

রংপুরের বদরগঞ্জ হাটে ছোট ছোট গরুর কাছে ক্রেতাদের ভিড়। হাটে ছোট গরু বিক্রিও হয়েছে অনেক বেশি।
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ৩৮ মণ ওজনের সেই বাদশাহর ক্রেতা ছিল না। শুধু তা–ই নয়, এবারে কোরবানির ঈদ ঘিরে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় বড় গরু তেমন বিক্রি হয়নি। এতে হতাশ গরুর খামারিরা।

তবে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি ছিল বেশ বেশি এবং এসব গরুর তুলনামূলক দামও ছিল বেশি।

বদরগঞ্জ পৌরসভার শাহাপুর ছকিমুদ্দিনেরডাঙ্গা গ্রামের খামারি ছাদেকুল ইসলাম হচ্ছেন বাদশাহর মালিক। তিনি জানান, তাঁর ছোট্ট খামারে ২০১৮ সালের জুনে বাদশাহর জন্ম হয়। বয়স তিন বছরের বেশি। চলনে-বলনে আচরণ বাদশাহর মতো হওয়ায় গরুটির আদর করে তাঁরা নাম রাখেন বাদশাহ। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। ওজন অন্তত ৩৮ মণ।

ছাদেকুল বলেন, বাদশাহর পেছনে খরচ লাগে বাদশাহর মতোই। প্রতিদিন সবুজ ঘাস, দানাদারসহ অন্য খাবার লাগে ৭০০-৮০০ টাকার। এই খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই মায়া ত্যাগ করে এবারের কোরবানির ঈদে অনেক চেষ্টা করলাম বাদশাহকে বিক্রি করতে। গরুটির দাম হাঁকিয়েছিলাম ১৪ লাখ টাকা। ইচ্ছে ছিল ১০ লাখের নিচে হলেও বিক্রি করব; কিন্তু হলো না।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদেকুল বলেন, একজন ক্রেতাও আগ্রহ দেখাননি বাদশাহকে কিনতে। তবে অনেকেই গরুটিকে দেখার জন্য বাড়িতে আসছেন। ৮ জুলাই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ডাকলেই গর্জে ওঠে ৩৮ মণ ওজনের বাদশাহ’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় পশুর হাট বসানো হয়েছিল অন্তত ৪০টি স্থানে। গত পাঁচ দিন ওই পশুর বাজার ঘুরে ১৩ জন ব্যবসায়ী ও অর্ধশতাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের কোরবানির ঈদে এক লাখ টাকার ওপরের দামের গরু তেমন বিক্রি হয়নি। তবে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি হয়েছে ব্যাপক।

বদরগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, এবারের কোরবানির ঈদে ৩৫-৫৫ হাজার টাকা দামের গরু রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, যা অতীতে কখনো হয়নি। আবার ৫৫-৭৫ হাজার টাকার গরুও বিক্রি হয়েছে ভালো। কিন্তু লাখ টাকার ওপরে দাম—এমন গরুর ক্রেতা ছিল হাতে গোনা। দুই লাখের ওপরে দামের গরু বিক্রিই হয়নি।
তারাগঞ্জের বুড়িরহাট গ্রামের খামারি মহিউদ্দিন আযম বলেন, ‘আমার খামারে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু ছিল ১৬টি। এগুলো ৪০-৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু লাখ টাকার ওপরে দামের গরু তিনটি বিক্রি করতে পারিনি। বড় গরু কেনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এবার করোনার কারণে বাইরের লোকজন গরু কিনতে আসেনি। তাই বড় গরু বিক্রিও করা সম্ভব হয়নি।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে কোরবানির শেষ পশুর হাট তারাগঞ্জের বুড়িরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ গরু উঠেছে। বিক্রি এবং দামও ছিল ভালো। ইকরচালি গ্রামের সফিকুল ইসলাম ৪৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, ‘ইনজেকশন মারিয়া গরু মোটাতাজা করে। দামও লাখ টাকার ওপরে। উগলা গরু বড় লোকেরা কেনে। এইবার করোনাত বড় লোকেরা গরু কিনবার আইসে নাই। সেই জন্যে বেচাও হয় নাই।’

গতকাল সোমবার ছিল বদরগঞ্জ হাট। এটি উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই পশুর হাট জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। ক্রেতা–বিক্রেতার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। ছিল না বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক।

তবে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জের পশুর হাটে ছাগল তুলনামূলক অনেক কম দামে বিক্রি হয়েছে।