ছোট্ট উদ্যোগের সফলতা থেকে একদল ‘আলোর পথের যাত্রী’

তরুণ ও কিশোর মিলে মোট ৪৮ জন সদস্য ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ নামের সংগঠনটির
ছবি: প্রথম আলো

দরিদ্র পরিবারের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আর্থিক সংকটে বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি দিতে পারছিল না। কথাটা কানে আসে রিফাত বিন মুহিতের। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর মুঠোফোনভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপে খোলেন গ্রুপ। অন্যদেরও নিজের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করেন। সবাই মিলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাঁরা আর্থিক সহায়তা দেন। অন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ফি কমিয়ে ভর্তি হয়ে যায়।
এই ছোট্ট উদ্যোগের সফলতা রিফাতের ভেতরে নতুন কিছু করার তাগিদ সৃষ্টি করে। সময়টা করোনা মহামারিতে স্থবির। স্কুল-কলেজ বন্ধ। হাতে অঢেল সময়। বেশির ভাগ সময় অপচয় হয় মুঠোফোনের পর্দায়। নিজের এসব ভাবনা সমবয়সী কিছু তরুণ ও কিশোরের কাছে তুলে ধরেন রিফাত। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের যাত্রা শুরু মাস তিনেক আগে। এই অল্প সময়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বেশ কয়েকটি কাজ করে এলাকাবাসীকে মুগ্ধ করেছেন উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নভিত্তিক সংগঠনটির সদস্যরা।

সংগঠন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই সংগঠনের ব্যানারে এলাকার প্রায় অর্ধশত কিশোর-তরুণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে একের পর এক সমাজসেবামূলক কাজ করে সবার নজর কেড়েছেন তাঁরা। এলাকার দুটি সর্বজনীন কবরস্থানে বেড়ে উঠেছিল ঝোপঝাড়। সেখানে বিভিন্ন জাতের গাছপালা রয়েছে। তারই ফাঁকে গজিয়ে ছিল বুনো ছোট–বড় গাছ, গুল্মলতা। এই ঝোপঝাড়ের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় পুরোনো কবরগুলো। দীর্ঘদিন ধরে কবরস্থান দুটিতে এই অবস্থা ছিল।
গত ৫ থেকে ৮ আগস্ট সংগঠনের সদস্যরা পরিষ্কার করেছেন ইউনিয়নের হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন সর্বজনীন কবরস্থান। কবরস্থানটি প্রায় ৯০ শতক জায়গাজুড়ে। একই সময়ে তারা পরিষ্কার করেছে কলাজুরা বাজারসংলগ্ন প্রায় ৯০ শতক জায়গার আরেকটি সর্বজনীন কবরস্থান।

সংগঠনের উদ্যোগে সেচ্ছাশ্রমে চলছে পরিস্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখার কলাজুরা বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

এর বাইরে সংগঠনটির উদ্যোগে পরিষ্কার করা হয়েছে কলাজুরা বাজারটি। যেখানে-সেখানে বর্জ্য, পলিথিন, ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছিল ওই বাজারে। সেগুলো পরিষ্কারের পর বাজারের চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। অন্যদিকে কলাজুরা পাকা সড়কের দুই পাশে বেড়ে উঠেছিল গাছপালা, লতাপাতা, ঝোপ। সেগুলো সড়কের ওপরে চলে এসেছিল, তাতে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে সড়কটি। যানবাহন ও পথচারী চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। সংগঠনের সদস্যরা কলাজুরা বাজার থেকে বাংলা নার্সারি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করেছেন।
এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকার মসজিদগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। কলাজুরা গ্রামের প্রতিটি ঘরে গিয়ে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করে দিয়েছেন তাঁরা। কাজের সূচনাটা করা হয় ‘স্বাগতম কলাজুরা’ ও ‘ধন্যবাদ কলাজুরা’ সাইনবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে। শুরুতে সংগঠনের সদস্যরা কিছু খেলাধুলার আয়োজন করেছিলেন।

সংগঠনে এখন ৪৮ জন সদস্য। এর মধ্যে সভাপতিসহ চারজন কলেজের শিক্ষার্থী। সভাপতি পদে আছেন সংগঠনের উদ্যোক্তা রিফাত বিন মুহিত নিজেই। সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি সদস্যরা স্কুলপড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদক পদে আছে মুরাদ আজীর।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে শুক্রবার কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, এত দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। ফলে সমাজসেবামূলক কাজ করার বড় সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা আবার পড়ালেখায় মন দিতে চান। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বা অবসরে তাঁরা এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাবেন।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য আজিম উদ্দিন ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি ‘আলোর পথের যাত্রী’দের এসব কাজের বিষয়ে অবগত আছেন। আজিম উদ্দিন বলেন, করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিশোর-তরুণেরা মুঠোফোনেই সময় কাটায়। এ সময়টা অপচয় না করে কাজে লাগিয়েছে এই সংগঠনের সদস্যরা। তারা যেসব সমাজসেবামূলক কাজ করেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।