জলাবদ্ধতায় নাকাল বাসিন্দারা

নগরের ভাটপাড়া, বিষ্ণুপুর, কালিয়াজুরি, ছোটরা, রেসকোর্স এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড।

  • স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাবনা, নাগরিক সমস্যা যিনি দূর করবেন, তাঁকেই তাঁরা আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোট দেবেন।

  • ১ নম্বর ওয়ার্ডের লাগোয়া ছোটরা এলাকা নিয়ে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা বেশি। সামান্য বৃষ্টি হলে বাসাবাড়ি ও সব সড়কে পানি জমে থাকে।

  • কালিয়াজুরি ও রেসকোর্স এলাকা নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওই এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

কুমিল্লা নগরের উত্তরাঞ্চলের গোমতী নদীর তীরের ভাটপাড়া, বিষ্ণুপুর, কালিয়াজুরি, ছোটরা, রেসকোর্স এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এই তিনটি ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও ভাঙাচোরা সড়ক। নেই বিনোদনের ব্যবস্থা। রয়েছে মাদক ব্যবসাও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাবনা, নাগরিক সমস্যা যিনি দূর করবেন, তাঁকেই তাঁরা আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেবেন।

সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত নগরের তিনটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নগরের মগবাড়ি চৌমুহনী থেকে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত সড়কের মধ্যে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায়ও গর্ত। এ সড়কের লাগোয়া দুই পাশের গলির ভেতরের সড়কের পাশে উঁচু নালা। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক বলেন, একসময় এ এলাকায় মাদকের বিশাল কারবার ছিল। এখন সেটি অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নেই।

একসময় এলাকায় মাদকের বিশাল কারবার ছিল। এখন সেটি অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
জহিরুল হক, সাবেক আহ্বায়ক, সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লা

১ নম্বর ওয়ার্ড

১ নম্বর ওয়ার্ড (বিষ্ণুপুর ও ভাটপাড়া) থেকে টানা দুইবার কাউন্সিলর হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথি কাজী গোলাম কিবরিয়া। এবারও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন আবুল হোসেন। তাঁরা দুজনই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেশি। রিকশাচালক, রাজমিস্ত্রি বেশি। এখানকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাটও ভাঙাচোরা। আমি চেষ্টা করেছি উন্নয়নকাজ করতে। ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছি। আমার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা ছিল। ১০টি থেকে অব্যাহতি পেয়েছি। মামলা ও নানা ধরনের হয়রানিতে জনগণের শতভাগ খেদমত করতে পারিনি।’

কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিবর্তনের পক্ষে এবার ভোটারেরা ভোট দেবেন।

২ নম্বর ওয়ার্ড

১ নম্বর ওয়ার্ডের লাগোয়া ছোটরা এলাকা নিয়ে নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা বেশি। সামান্য বৃষ্টি হলে বাসাবাড়ি ও সব সড়কে পানি জমে থাকে। ঘনবসতি ও ছোটরা জংলি বিবি মসজিদের সামনের পুকুরে ময়লা–আবর্জনার স্তূপ। পুকুরপাড়ের সড়কে বাসাবাড়ির সামনে বাজার বসেছে। প্রতিদিন সকালে মানুষ গিজগিজ করে। এতে আশপাশের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে আছেন।

এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা সংগীতশিল্পী কাজী ইকরাম মোস্তাফিজ বলেন, জলাবদ্ধতা এখানকার অন্যতম সমস্যা।

স্থানীয় বাসিন্দা কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুর রহমান বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন বাসা থেকে বের হতে পারি না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও সুন্দর না।’

এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহানগর যুবলীগের সদস্য মাসুদুর রহমান। এ ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর (বর্তমানে কারাগারে) মো. বিল্লাল ও তাঁর স্ত্রী নাহিদা আক্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী গোলাম ছারোয়ার সিপন ও আবদুল মন্নাফ। এই পাঁচজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে পারিনি। তবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আমার সম্মানী ভাতা থেকে বিনা মূল্যে জন্ম, মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ দিয়েছি। করোনাকালীন কাজ করেছি।’

৩ নম্বর ওয়ার্ড

কালিয়াজুরি ও রেসকোর্স এলাকা নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওই এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে শাসনগাছা বাদশা মিয়ার বাজার পর্যন্ত খালের কালো পচা গন্ধযুক্ত পানির জন্য দুই পারের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে আছেন। নুর মসজিদ সড়কে যানজট লেগে থাকে। সড়কও ভাঙাচোরা। ধানমন্ডি সড়ক এলাকায়ও পানি জমে থাকে। গত দুই দিনের বৃষ্টির পানি খালে জমে উপচে পড়ছে সড়কে। বাদশা মিয়ার বাজারেও সরু সড়কের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।

নগরের রেসকোর্স এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল খালেক বলেন, এলাকায় উন্নয়নকাজ হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা রোধ করা যাচ্ছে না।

এ ওয়ার্ডে টানা দুইবারের কাউন্সিলর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সরকার মাহমুদ জাবেদ। এবারও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন মো. শাহজাহান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফয়েজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মুরাদ মিয়া, প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির মো. এনামুল হক ভূঁইয়া ও স্বপন আলী এবং শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি।

বর্তমান কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা ও রেসকোর্স খাল নিয়ে বিপাকে আছি। এ সমস্যা দূর করতে পারিনি। করোনাকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহযোগিতা ও সেবা দিয়েছি।’