জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে কৃষকদের অবস্থান কর্মসূচি
জলাবদ্ধতা নিরসন, কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে পচা ধান নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কৃষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে কলারোয়ার কয়েক শ কৃষক ওই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে দ্রুত জলাবদ্ধতার নিরসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন কৃষকেরা।
কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদুর রহমান কৃষকদের এ ধরনের ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয় অবগত হয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে ও দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ২১ বছর পর জমিতে ধান চাষ করে কৃষকেরা অনেক খুশিতে ছিলেন। আশা করেছিলেন, এবার তাঁদের অভাব-অনটন কেটে যাবে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে রোপণ করা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাঁদের হাসি মলিন হয়ে গেছে। এখন কৃষকেরা কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
কলারোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের কৃষক জয়ন্ত কুমার পাল, হামিদুল ইসলাম ও নূর ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে তিন হাজার বিঘা আয়তনের মুরারিকাটি বিলে ২১ বছর ধরে আমন ফসল হয় না। ফলে এ বিলের মালিক ও কৃষকেরা কষ্টে জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় মুরারিকাটি, কুমারনল ও কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এক হয়ে একটি সেচ কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি নয় লাখ টাকা ব্যয় করে জমি ধান চাষের উপযোগী করতে উজানের একটি কালভার্টের মুখ আটকিয়ে দেয়। পাশাপাশি কমিটি পার্শ্ববর্তী সরকারি চান মল্লিকের খাল দিয়ে পানি বেতনা নদীতে নামানোর জন্য একটি শক্তিশালী পাম্পের ব্যবস্থা করে। পাম্পের মাধ্যমে পানিনিষ্কাশন করে ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে দুই হাজার কৃষক আমন ধান রোপণ করেন। কিন্তু কালভার্টের মুখ খুলে দিয়ে জুলাই মাসের শেষের দিকে তাঁদের ওই আড়াই হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ধানগাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দুই হাজার কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
মুরারিকাটি গ্রামের রাশিদা খাতুন কান্নাজড়িত কষ্টে বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ, চার মেয়ে নিয়ে আমি খুব কষ্টে বেঁচে আছি। এবার অনেক দিন পর আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চার মেয়ে আর আমি মিলে চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ধানের চারা হয়েছিল ভালো। কিন্তু জুলাই মাসের ২৮ তারিখ কালভার্টের মুখের বালুর বস্তা সরিয়ে দিয়ে তাঁর জমিসহ সব জমি ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব।’
একই গ্রামের আজিজুর রহমান জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট ও ধান চাষ করেছিলেন। এ জন্য সমিতি থেকে ১২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের মাছের ঘেরে পানি তোলার জন্য কালভার্টের মুখ থেকে বালুর বস্তা সরিয়ে দিয়ে তাঁদের সব জমি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সেচ কমিটির সভাপতি আরিজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, নুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ওই বিলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের দুটি মাছের ঘের রয়েছে। সেচ কমিটি পানিনিষ্কাশন করে ধান চাষ করায় তাঁর মাছের ঘেরে পানির সংকট দেখা দেয়। তাই চাঁদ মল্লিকের খালের মুখ বন্ধ করে দিয়ে কালভার্টের মুখ থেকে বালুর বস্তা সরিয়ে দিয়ে ২ হাজার ৫০০ বিঘার আমন ফসল পানিতে তলিয়ে দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, কালভার্টের মুখ কারা খুলে দিয়েছেন, তা তিনি জানেন না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁর নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই বিলে তাঁর বাবার সবচেয়ে বেশি জমি। তাঁর বাবার জমিও তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর মাছের ঘেরে পানি তোলার জন্য পাম্প রয়েছে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেন এ কাজ করবেন?