জাজিরা-শিমুলিয়া নৌপথে রাতে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভোগান্তি

ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস পারাপার বন্ধ থাকায় মালপত্র নিয়ে হেঁটে ফেরিঘাটে আসছেন অনেকে। গতকাল জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের ফেরিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হতো। তবে এ নৌপথে এখন আট ঘণ্টা ফেরি চলে। আবার যাত্রীবাহী বাস পারাপারও বন্ধ রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের ঢাকাগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসগুলো রাতে জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে আসছে। ওই বাসের যাত্রীদের তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘাটে পৌঁছাতে হয়। এরপর ফেরিতে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে আবার বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথ দিয়ে শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ফেরিতে পারাপার হয়।

গত বছর ২০ জুলাই পদ্মা সেতুর একটি পিলারের সঙ্গে রো রো ফেরির ধাক্কা লাগে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ফেরিগুলো পদ্মা সেতুর সঙ্গে কয়েক দফা ধাক্কা লাগে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর ১৮ আগস্ট থেকে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়েন। এরপর নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় ওই নৌপথে দিনের বেলা স্বল্প পরিসরে ফেরি চলাচল চালু করা হয়। কিন্তু ফেরিতে কোনো যাত্রীবাহী বাস পারাপার হচ্ছে না। বিকল্প ঘাট হিসেবে জাজিরার সাত্তার মাদবর-মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় ডিসেম্বরে ফেরিঘাট চালু করা হয়। কিন্তু ওই ঘাটেও ফেরিতে বাস পারাপার বন্ধ রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা বাসে করে দিনে বাংলাবাজার ঘাটে যান। পরে যাত্রীরা লঞ্চ ও স্পিডবোটে নদী পার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। আর রাতে চলাচলকারী বাসগুলো সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটে যায়। ঘাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গনির মোড় এলাকায় বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীরা দীর্ঘ এ পথ হেঁটে বা ভ্যানে চড়ে ফেরিঘাটে পৌঁছান।

সাতক্ষীরা থেকে ইমাদ পরিবহনে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন শরীফুল আলম। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে মঙ্গল মাঝির ঘাট-জাজিরা সড়কের গনির মোড় এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে ঘাটে পৌঁছে ফেরিতে ওঠেন তিনি।

শরীফুল আলম বলেন, ‘আগে কখনো এ পথে ঢাকায় যাইনি। রাতদুপুরে মালামাল নিয়ে তিন কিলোমিটার হাঁটা যে কত কষ্টের, তা বলে বোঝাতে পারব না। ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস পারাপার করলে আমাদের এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’

খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস বাসের ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর আগস্টে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি পারাপার বন্ধ হওয়ার পর দূরপাল্লার বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ শুরু হয়। ফেরি চালু হলেও বাস পারাপার চালু হয়নি। এখন রাতে চলাচলকারী যাত্রীদের ঘাটের কাছে নামিয়ে দিতে হয়। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, বাসমালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার, সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে বাংলাবাজার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ। আর মঙ্গল মাঝির ঘাটের সড়ক সরু, টার্মিনাল নেই। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই ওই পথ দিয়েও ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস পারাপার বন্ধ রয়েছে। তাই বাসের যাত্রীরা হেঁটে ঘাটে এসে ফেরি দিয়ে পার হচ্ছে। ঈদের সময় ওই যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।