জামালপুরে পানিবন্দী মানুষ খাদ্যসংকটে
ভিক্ষা করে পেট চালান জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বামনা গ্রামের জমিলা বেগম (৭৫)। কিন্তু গ্রামের সব জায়গায় বন্যার পানি ওঠায় ভিক্ষাও একরকম বন্ধ। আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বামনা বাজারে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। জানালেন, ক্ষুধা পেটে পানি ডিঙিয়ে মুড়ি কিনতে বামনা বাজারে এসেছেন তিনি।
জামিলার ঘরের ভেতরেও এখন হাঁটুপানি। তিনি ঘরের ভেতরেই মাচা তৈরি করে বাস করছেন। কিন্তু ঘরে খাবার নেই। এই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষই এখন বন্যাকবলিত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
ইসলামপুর-উলিয়া সড়কে এখন হাঁটুপানি। আশপাশের এলাকাগুলোতে বন্যার পানি কোথাও বুক, কোথাও কোমর পর্যন্ত উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে সব জায়গায় পানি থই থই করছে। বামনা বাজারেও এখন কোমরপানি। বাজারের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। আবদুল করিমের দোকান খোলা রয়েছে। তবে দোকানের ভেতরেও পানি। তিনি নৌকায় মালামাল সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দোকানটি খোলার খবর শুনে আকলিমা বেগম নামের এক গৃহবধূ মুড়ি কিনতে আসছেন।
আকলিমা বলেন, ‘ঘরে পানি উঠেছে। তাই রান্না করার কোনো উপায় নেই। ঘরে কোনো শুকনো খাবারও নেই। দুপুর হয়ে গেছে, ছেলেমেয়েদের তো কিছু খাবার দিতে হবে।’
চিনাডুলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু ঘরবাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। ঘরের ভেতর অনেকেই মাচা তৈরি করে থাকছেন। ওই গ্রামের তারা মিয়া বলেন, ‘এমনিতেই করোনায় কাজ নাই তেমন, এর মধ্যে আবার বন্যা শুরু হলো। খুব কষ্টের মধ্যে দিন যাচ্ছে। চেয়ারম্যান কিছু চাল দিয়েছে। সেগুলোই খাচ্ছি। তবে ওই চাল ফুরিয়ে গেলে কীভাবে চলব, সেটা জানি না।’
জেলার বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামেই সব ধরনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের সড়ক তলিয়ে গেছে। নৌকাই এখন যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। দুর্গত পূর্ব বামলা, বামনা, মাঝিপাড়া, শিংভাঙা, দেলিরপাড় গ্রামের লোকজনকে নৌকায় যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তবে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এস অঞ্চলের বাসিন্দারা।
পানিবন্দী কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা সবাই জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাত দিন ধরে গ্রামে গ্রামে পানি ঢুকেছে, অথচ তাঁদের বেশির ভাগই কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সাত দিনে মাত্র চার মেট্রিক টন চাল এসেছে। শুধু চাল দিয়ে মানুষ কী করবে। চালের সঙ্গে আরও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রয়োজন। এত মানুষের জন্য অল্প কিছু চাল দিয়ে তো হয় না।’
তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী প্রথম আলোকে বলেন, এরই মধ্যে বন্যার্ত মানুষের জন্য সারা জেলায় ১১২ মেট্রিক টন চাল, ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এক হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সবাই ত্রাণ সহযোগিতা পাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।