‘জারখানোত কম্বল দিয়ে খুপে (খুব) উপকার করলেন, বাপু। দিনের বেলা কুনিক (অল্প) রোদ উঠিলেও রাইতোত শীল শীল বাতাস খানোত হাত-পাওলা ককড়া হয় আসেছে, ঘরের টাটির (বেড়া) ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢুকেচে, এইবার মোক কেহ (কেউ) কম্বল দেয়নি, তোমরায় পরথম দিলেন।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের নিতুপাড়া এলাকায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ নারী ইমামী বেগম।
আজ মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা আট দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এরই মধ্যে আজ সকালে আটোয়ারী উপজেলা সদরের আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অসহায়, দুস্থ, প্রতিবন্ধীসহ ১৫০ নারী-পুরুষকে দেওয়া হয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল।
এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মানুষদের সহায়তায় আটোয়ারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দুস্থ ও অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে তালিকা তৈরি করেন ও একটি করে টোকেন তুলে দেন। কম্বল বিতরণের সময় আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর, আটোয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. দুলাল উদ্দিন, আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস, বলরামপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফ হোসেন চৌধুরী, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় প্রথম আলো বন্ধুসভার সহসভাপতি রায়হান শরীফসহ প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য ও আটোয়ারী উপজেলায় কর্মরত স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে বন্ধুসভার সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন, পঞ্চগড় শহরের ডোকরোপাড়া, রামের ডাঙ্গা, সদর উপজেলার চেকরমারী ও জেলা শহরের উপকণ্ঠে ফুলতলা এলাকায় গরিব ও দুস্থ মানুষের বাড়িতে গিয়ে আরও ৫০টি কম্বল বিতরণ করেন। এভাবেই মঙ্গলবার দিনভর প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২০০টি কম্বল বিতরণ করেছেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
এখন বয়স হইচে বাবা, বেশি ঠান্ডার কারণে মানুষের কাজও করতে পারি না। এই কম্বলডা পায়া অনেক উপকার হইচে। রাতে গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে পারিম।
৬০ বছর বয়সী আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকার বাসিন্দা বিরেণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন বয়স হইচে বাবা, বেশি ঠান্ডার কারণে মানুষের কাজও করতে পারি না। এই কম্বলডা পায়া অনেক উপকার হইচে। রাতে গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে পারিম।’
আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের রাখালদেবী এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মুই তোমহার তানে দুয়া করিম, বাপু। মোর কোন বেটা (ছেলে) নাই। নিজে নিজে বুড়া বয়সে কাজ করে খাচু। মোর কাহাও খোঁজও নেয় না। এই কম্বলখান পায়া এলা শান্তিতে ঘুমাবা পারিম।’