জুলিয়াকে ফিরে পাওয়ার কাহিনিটা সিনেমার মতো
স্বামী নিরুদ্দেশ বহু আগেই। এ অবস্থায় একমাত্র মেয়েকে নিয়েই সংসার জাহানারা বেগমের। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সেই মেয়েও নিরুদ্দেশ হওয়ায় যেন অকূলপাথারে পড়েন ঢাকার উত্তরার এই বাসিন্দা। ঘটনার আট দিন পর বগুড়া থেকে মেয়েকে যেভাবে ফিরে পেয়েছেন, সেই কাহিনি সিনেমার মতোই।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহানারা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরায় তাঁদের বহুতল একটি ভবন রয়েছে। জুলিয়ার বাবা মোহাম্মদ জালাল অনেক আগেই নিরুদ্দেশ। একমাত্র মেয়ে জুলিয়া আকতারকে (২২) অবলম্বন করেই তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু মেয়েটা জন্ম থেকেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। মানসিক সমস্যাও আছে। কয়েকবার বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। পরে আবার খুঁজে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ঈদের দুদিন আগে (১৯ জুলাই) জুলিয়া বাসা থেকে নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান মেলেনি।
জাহানারা বেগম বলেন, গণমাধ্যমে ছবি দেখে সোমবার পরিচিত একজন তাঁকে খবর দেন, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে জুলিয়ার মতো দেখতে একজন উদ্ধার হয়েছেন। এরপর তিনি সেখানকার ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর মেয়েকে আনতে সোমবার রাতেই সারিয়াকান্দিতে যান। মঙ্গলবার দুপুরের পর মেয়েকে নিয়ে উত্তরার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের কড়িতলা বাজারে পাওয়া যায় জুলিয়াকে। নিজের নাম-পরিচয় কিছুই বলতে পারছিলেন না। ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে ঘুরেফিরে শুধু ‘উত্তরা’ বলতে থাকেন তিনি। পরে উপজেলা প্রশাসন তাঁকে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের আনসার সদস্য মিলন মিয়ার হেফাজতে দেয়।
গণমাধ্যমে এই খবর বেরোয়। ওই খবরের সূত্র ধরে জাহানারা সোমবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়ার সঙ্গে। ইউএনও নানাভাবে যাচাই শুরু করেন। জাহানারার বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় জুলিয়ার সবকিছু। এরপর জাহানারাকে মেয়ের ছবি পাঠাতে বলেন ইউএনও। সেই ছবির সঙ্গে চেহারা মিলে যায়।
এরপর ইউএনও মুঠোফোনের মাধ্যমে ভিডিও কল দেন মা জাহানারাকে। জাহানারাকে কোনো কথা বলতে আগেই নিষেধ করে রাখেন। ভিডিও কলে জাহানারাকে দেখেই ‘মা’, ‘মা’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন জুলিয়া। তখন জাহানারাও আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। আবেগে আপ্লুত হয়ে ‘জুলিয়া মা’ বলে চিৎকার করেন। ইউএনওর আর বুঝতে বাকি থাকে না জাহানারারই মেয়ে জুলিয়া। তাঁকে ফিরিয়ে নিতে জাহানারাকে সারিয়াকান্দিতে আসতে বলেন ইউএনও। গাড়িতে করে সোমবার মধ্যরাতে তিনি পৌঁছান সারিয়াকান্দিতে। ইউএনওর বাসায় গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন।
হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে কাছে পেয়ে মা জাহানারা বুকে জড়িয়ে ধরেন। প্রতিবন্ধী জুলিয়াও আবেগে আপ্লুত হয়ে মায়ের বুকে মুখ লুকান। মঙ্গলবার ইউএনও রাসেল মিয়ার দপ্তরে জুলিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় মা জাহানারার হাতে। এ সময় বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও রাসেল মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেই মেয়েটির অভিভাবকের কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তাই মেয়েটিকে রাজধানীর মিরপুরে সরকারি ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবারই মেয়েটিকে সেখানে পাঠানোর কথা ছিল। এর মধ্যেই তাঁর মাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। মায়ের কাছে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে পেরে অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে।