নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের হাজীপুরে বাবার কোলে চার বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনের নেতারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় চৌমুহনী-মাইজদী সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় কর্মসূচির স্থলে পুলিশ ও র্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে কর্মসূচি ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেলা তিনটা থেকে প্রায় পৌনে চারটা পর্যন্ত কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এত দিন শুনে এসেছি সারা পৃথিবীর মধ্যে মা-বাবার কোলে শিশু সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেই সত্যটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় মা-বাবার কোলে শিশু মারা যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বেগমগঞ্জের হাজীপুরে শিশু তাসপিয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বাবার কোলে শিশু তাসপিয়ার সারা শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণ অধিকার পরিষদের কর্মসূচি পালন ঘিরে জুমার নামাজের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে গণ অধিকার পরিষদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা চৌমুহনী চৌরাস্তায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা তিনটায় তাঁরা চৌরাস্তার দক্ষিণ পাশে চৌমুহনী-মাইজদী সড়কে শিশু তাসপিয়া হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন-সমাবেশ শুরু করেন।
এ সময় কর্মসূচিতে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মী ছাড়াও নিহত শিশু তাসপিয়ার আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের বাসিন্দা এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন তাসপিয়ার ফুফু লিমা আক্তার, চাচাতো ভাই ইমাম হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের জেলা শাখার সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দিন, বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সিনবাদ শাকিল প্রমুখ।
গণ অধিকার পরিষদের নেতারা বক্তব্যে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশু তাসপিয়ার খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় গণ অধিকার পরিষদের পক্ষে সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত বুধবার বিকেল চারটার দিকে চার বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তারকে চিপস-জুস কিনে দিতে কোলে নিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর মালেকার বাপের দোকান এলাকায় যান আবু জাহের। তিনি তাঁর ভাগনে আবদুল্লাহ আল-মামুনের দোকানে বসে কথা বলছিলেন। এমন সময় পূর্ববিরোধের জেরে দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার রিমন কয়েকজন সহযোগী নিয়ে সেখানে গিয়ে মামুন ও জাহেরকে গালমন্দ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা একপর্যায়ে কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে। এ সময় জাহের তাঁর শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে দ্বিতীয় দফায় গুলি করেন রিমন ও তাঁর সহযোগীরা। এতে শিশু তাসপিয়ার মাথা ও মুখমণ্ডল গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। আর জাহের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন।ঢাকায় নেওয়ার পথে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় রিমনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে।