‘টাকার পোঁটলা পানিত ভাসি গেইছে’

হঠাৎ বন্যায় পানির স্রোতে ভেঙে গেছে সড়ক। রোববার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বাগেরহাট গ্রামে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

‘নদীর পানির স্রোতে শোগ শেষ হইছে। টাকার পোঁটলা পানিত ভাসি গেইছে, সেইটা খুঁজতোছি। ভাঙি যাওয়া ভিটা ও ভাঙা ঘরের ভেতর যদি কিছু পাওয়া যায়, তা হাতরে বেড়াইতোছে।’ নদীভাঙন ও বন্যাদুর্গত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইব্রাহিম মিয়া আজ রোববার সকালে এসব কথা বলেন। এবারের আকস্মিক বন্যায় ইব্রাহিমের মতো গ্রামের আরও অনেকের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ফসলও বিনষ্ট হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফসলের ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে নষ্ট হওয়া আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাদামসহ রবি ফসল আবারও নতুন করে কৃষকদের লাগাতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকা বাগেরহাট, পশ্চিম ইছলি, বিনবিনা, মটুকপুর ও মহিপুর থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি, বরং বেড়েছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়িগুলো ঠিকঠাক করারও কোনো উপায় নেই। কারণ পুরোটাই ধসে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, অধিকাংশ মানুষ বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যার স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে ঘরের অনেক কিছু। আশায় আশায় টাকার পোঁটলাটি খুঁজছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইব্রাহিম মিয়া। রোববার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বাগেরহাট গ্রামে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

বাগেরহাট গ্রামের নওশাদ মিয়ার বাড়ি ভেঙে নদীর স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পানি সরে যাওয়ার পর বিধ্বস্ত বাড়ির জরুরি কাগজপত্র ও জমির দলিল রোদে শুকানোর চেষ্টা করছেন তিনি। নওশাদ বলেন, ‘হামার এটে বহু বছর ধরি এমন বন্যা হয় নাই। ভালোই কাটছিল আমার জীবন। কিন্তু এবার কপাল ভাঙি গেল। শোগ শেষ হয়া গেল। সরকারিভাবে এলাও কোনো সাহায্য পাই নাই।’

পশ্চিম ইছলি গ্রামের সঙ্গে বাগেরহাটসহ আরও কিছু এলাকার সড়কড়গুলো স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে। হাঁটাচলা করারও কোনো উপায় নেই। এসব এলাকার মানুষ বিধ্বস্ত বাড়ি ও জিনিসপত্র নৌকায় করে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া জমির দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রোদে শুকানো হচ্ছে। রোববার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বাগেরহাট গ্রামে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

পশ্চিম ইছলি গ্রামের আবদুল মতিন ৬০ হাজার টাকা ঋণ করে এবার মিষ্টি কুমড়া ও আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন। বন্যার পানির স্রোতে এক রাতে সব শেষ হয়ে গেছে। বিলাপ করছিলেন, আর তিনি বলছিলেন, ‘আবাদ নষ্ট হইল। কিন্তু ঋণের টাকা শোধ করমো কেমন করি।’

হঠাৎ উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী গ্রামে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। স্রোতে তোড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর ও জমির ফসল।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুনিমুল হক বলেন, ইতিমধ্যে ২০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগির এর একটা সুরাহা হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন