টাকার মালা পাচ্ছেন জয়ী প্রার্থীরা, সমালোচনা

অর্থ ও পেশিশক্তির বহিঃপ্রকাশের একটি নতুন রূপ বলছেন বিশ্লেষকেরা। এই সংস্কৃতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি।

সাভারের বিরুলিয়া ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সেলিম মণ্ডলের গলায় শোভা পাচ্ছে টাকার মালা
ছবি: সংগৃহীত

‘আমাগো সময়ে চেরমেন (চেয়ারম্যান) হওনের পর ফুলের মালা গলায় পইরা ঘুরত। অহন দেহি টেহার (টাকা) মালা পইরা ঘুরে। ফুলের দিন শ্যাষ, অহন চেরমেন গো ফুল দেয় না টেহা (টাকা) দেয়।’

ঢাকার সাভারে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে এমন মন্তব্য রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের। গত সোমবার রাতে সাভারের রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে চায়ের দোকানে ইউপি নির্বাচন নিয়ে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুলের কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে সাভারে ইউপি নির্বাচনের পর থেকে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে টাকার মালা পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এমন রেওয়াজ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবৈধ বলে আমি মনে করি। এ ধরনের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এটি অর্থ ও পেশিশক্তির বহিঃপ্রকাশের একটি নতুন রূপ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুনাফা অর্জনের প্রাথমিক নির্দেশক এটি। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়, তেঁতুলঝোড়া ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলমকে নিয়ে গত রোববার একটি পোস্ট দেন তাঁর এক সমর্থক। সেখানে ফখরুল আলমের গলায় দেখা যায়, জারবেরা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট দিয়ে তৈরি মালা।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘এটি আমি পছন্দ করি না। আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকেরা অনেক সময় ফুলের সঙ্গে টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিয়ে ফেলেন।’

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্টে দেখা যায়, বিরুলিয়া ইউপিতে নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. সেলিম মণ্ডলের গলায় শোভা পাচ্ছে ১০০০ টাকার চকচকে নোটের মালা। সেলিম মণ্ডল বলেন, ‘সমর্থকেরা ভালোবেসে কখন পরিয়ে দিয়েছেন টের পাইনি। অনেককেই তো এমন মালা পরতে দেখেছি। বিষয়টি খেয়াল করা উচিত ছিল।’

আরেক পোস্টে বিরুলিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য আবদুল কাদিরকে সংর্বধনা দেওয়ার সময় গলায় টাকার মালা পরে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া আশুলিয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজাদ হারুন অর রশিদ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুহুল আমিন মণ্ডলকে দেখা যায় গলায় টাকার মালা পরা অবস্থায় বক্তব্য দিতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি কখনো ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে না। এ ব্যাপারে তাঁদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, বিষয়টি নিম্ন রুচির পরিচয় বহন করে। এ নিয়ে তিনি সবার সঙ্গে কথা বলবেন।