টাকা নিয়েও আপস না করায় চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ দুজনকে হত্যা

এরশাদুল-বাদল মামলার অন্যতম আসামি আশরাফুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদুল হক (৩৫) ও তাঁর সহযোগী বাদল সরকারকে (২৫) গুলি করে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। ৮০ লাখ টাকা নিয়েও সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় আপস না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এরশাদুল-বাদল মামলার অন্যতম আসামি আশরাফুল ইসলাম ওরফে রাব্বি (৩৭) পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আজ বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলামকে আদালতে নেওয়া হবে।

এরশাদুল হক
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানায়, ১৭ ডিসেম্বর রাতে নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামে এরশাদুল ও বাদলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এরশাদুলের ভাই মো. আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। গত রোববার দিবাগত রাতে কসবা উপজেলার বিদ্যানগর এলাকা থেকে আশরাফুলকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে। আশরাফুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আশরাফুল জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার মমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। এরশাদুল-বাদল হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল। এদিকে নজরুল ২০১৯ সালে খুন হওয়া এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফুল্লাহ হত্যা মামলারও ১০ নম্বর আসামি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইফুল্লাহ মিয়া খুন হন। ঘটনার পরদিন ২ এপ্রিল এরশাদুল বাদী হয়ে নান্দুরা গ্রামের আবদুল মালেক, আবু নাছির, তাঁর ছেলে নজরুল ইসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় আবদুল মালেক, আবু নাছির, নজরুলসহ ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এ মামলায় আবু নাছির বর্তমানে কারাগারে আছেন।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল জানান, সাইফুল্লাহ হত্যা মামলা আপস করার কথা বলে এরশাদুল নজরুলদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু টাকা নিয়েও আপস না করে এরশাদুল আদালতে মামলা চালিয়ে যান। সম্প্রতি এ মামলায় নজরুলের বাবা আবু নাছিরকে কারাগারে পাঠানো হলে নজরুলের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এরশাদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নজরুল।

এরশাদুল-বাদল হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল আরও বলেন, এরপর ১৭ ডিসেম্বর রাত নয়টার দিকে নজরুলের বাড়িতে রাতের খাবার খান আশরাফুল। খাওয়ার পর নজরুল ও আশরাফুল দুটি আলাদা মোটরসাইকেল নিয়ে নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে পথে এরশাদুলের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন আশরাফুল। পরে মোটরসাইকেল থেকে নেমে নজরুল তাঁর কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে এরশাদুল ও বাদলকে চারটি গুলি করেন। এরপর দ্রুত আশরাফুল সেখান থেকে কসবায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গা ঢাকা দেন। আর নজরুল সদর উপজেলার সুলতানপুর পর্যন্ত আশরাফুলের সঙ্গে গিয়ে আলাদা হয়ে যান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, আশরাফুলের সঙ্গে নজরুলের পূর্বপরিচয় ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল জানিয়েছেন, ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে এক মাস ধরে আশরাফুল নজরুলের বাড়িতে ছিলেন।

আরও পড়ুন

খুন হওয়া এরশাদুল নাটঘর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এবং বাদল ওই ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে। এদিকে হত্যার ঘটনার পর থেকে এরশাদুলের পরিবার দাবি করে আসছিলেন, জনপ্রিয়তা ও ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় এরশাদুলকে হত্যা করা হয়েছে। এরশাদুল তাঁর বাবার অসুস্থতার কারণে ইউপির বিভিন্ন কাজ দেখাশোনা করতেন।

আরও পড়ুন