যৌন হয়রানি
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজছাত্রী। ওই ছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই নারী।

এদিকে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন। বর্তমানে মো. মনজুর হোসেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

কলেজছাত্রী লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তাঁর সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। কলেজছাত্রীর পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে তিনি বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন। ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাঁকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তাঁরা দুই মাস থাকেন। বিয়ের জন্য ইউএনওকে চাপ দিলে তিনি ভারত থেকে ঘুরে এসে বিয়ে করবেন বলে মেয়েটিকে আশ্বাস দেন।

কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ইউএনও মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ অক্টোবর যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ দেন।

লিখিত অভিযোগে কলেজছাত্রী আরও বলেছেন, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল হয়ে ওই ছাত্রীকে নিয়ে ইউএনও ভারতের কলকাতা যান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদ যান। সেখানে একটি হাসপাতালে তাঁরা দুজন চিকিৎসা নেন। ইউএনওর পাসপোর্ট দেখে তিনি জানতে পারেন, মনজুর হোসেন বিবাহিত। ইউএনও দুই সন্তানের জনক বলে তিনি জানতে পারেন। সেখানে থাকার সময় তাঁর মুঠোফোন সেট থেকে তাঁদের দুজনের ভিডিও ও কথোপকথন মুছে ফেলেন ইউএনও। মনজুর হোসেন বিষয়টি কাউকে না জানাতে কলেজছাত্রীকে অনুরোধ করেন এবং ঘটনা প্রকাশ পেলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ভারতে ১২ দিন অবস্থান করার পর ৫ অক্টোবর বাংলাদেশে ফিরে আসেন তাঁরা। বিয়ের বদলে ইউএনও তাঁকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ইউএনও মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ অক্টোবর যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ দেন তিনি।

একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও ইউএনও আমার সঙ্গে এমন করতে পারেন, এটা আমি কোনো দিন বিশ্বাস করিনি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।
অভিযোগ উত্থাপনকারী কলেজছাত্রী

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে ইউএনও মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। পরে এ বছরের ৪ মার্চ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ইউএনও হিসেবে মো. মনজুর হোসেনকে পদায়ন করা হয়।

কলেজছাত্রী বলেন, ‘একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও ইউএনও আমার সঙ্গে এমন করতে পারেন, এটা আমি কোনো দিন বিশ্বাস করিনি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।’

মুঠোফোনে ইউএনও মনজুর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তদন্তের বিষয়টি আমাদের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) বিষয়।’

বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও মনজুর হোসেনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি বাসাইল থেকে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে বলেন, একটি মেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। ওই মেয়েটিকে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসি। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে মেয়েটি আমার অফিস থেকে চলে যায়।’

এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়বে। এর আগেই এই ইউএনওকে মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহারের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
মো. আতাউল গনি, জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল

কলেজছাত্রীর মা বলেন, ‘ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছে না। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরীনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি তদন্তকাজ শুরু করেছেন। ওই কলেজছাত্রী, ইউএনও মনজুর হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়বে। এর আগেই এই ইউএনওকে মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহারের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।