টিকাকেন্দ্রে ভিড়, নারী ও বয়স্কদের ভোগান্তি
ষাটোর্ধ্ব আফজাল মিয়া। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে যান সকাল ১০টায়। ভিড় ঠেলে টিকা নেন দুপুর সোয়া ১২টায়। একই কথা জানালেন সুলতানা বেগম নামের আরেক ষাটোর্ধ্ব নারী। নগরের কাজী ইলিয়াস এলাকার বাসিন্দা সুলতানা টিকাকেন্দ্রে পৌঁছার পর ভিড় দেখে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সঙ্গে থাকা ছেলের কথায় তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা একটার দিকে টিকা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
বৃহস্পতিবার থেকে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ করার খবরে উপচে পড়া ভিড় ছিল নগরের দুটি টিকাকেন্দ্রে। টিকাকেন্দ্র দুটি পরিচালনা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। টিকাকেন্দ্রে বেশি ভিড় ছিল সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে। ওসমানী হাসপাতালের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ভিড় দেখা গেছে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে।
দুটি টিকাকেন্দ্রেই যাঁরা সারি ধরে দাঁড়িয়ে টিকা কার্ড পরিদর্শন ও মুঠোফোনে টিকাদানের খুদে বার্তা দেখাচ্ছিলেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় টিকাকেন্দ্রে ভবনটির নিচতলার প্রবেশদ্বার থেকে সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন টিকাগ্রহীতারা। সারিতে পুরুষের তুলনায় নারীদের ভিড় অপেক্ষাকৃত কম। ভবনটির লিফট থাকলেও ভিড়ের কারণে সেটি চালু করা হয়নি। সময় যত গড়াচ্ছে ভিড় তত বাড়ছিল। সারি ভেঙে প্রবেশ করা নিয়ে কিছু সময় পরপর হট্টগোল বাধছিল। ভবনটির নিচতলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখে পড়েনি। তবে পঞ্চম তলায় কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণ থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরাও।
একই সিঁড়ির এক পাশে ওঠানামা এবং এক পাশে টিকার জন্য সারি ধরে দাঁড়িয়েছিলেন টিকাগ্রহীতারা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে টিকা নিতে আসা মানুষকে।
কেন্দ্রে প্রবেশের পর টিকা কার্ড ও মুঠোফোনে খুদে বার্তা যাচাই করেন দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। টিকার বুথের সামনে গিয়ে ফের সারি ধরে দাঁড়াচ্ছিলেন টিকাগ্রহীতারা। টিকাকেন্দ্রে ভিড় বেশি থাকায় অনেকে টিকা গ্রহণ করলেও টিকা কার্ডে সিল অথবা টিকা প্রদানকারীর নামের স্থান খালি ছিল।
নগরের মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘টিকা নিয়েছি, কিন্তু টিকা প্রদানকারীর নাম দেননি। ভিড় বেশি তাই তাড়াহুড়ো করে টিকার বুথ থেকে বের হয়েছি। টিকাকেন্দ্রে অবস্থানকালে বয়স্ক কাউকে আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন চিত্র চোখে পড়েনি।’
কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী নাবিল আহমদ বলেন, ভিড় এত বেশি যে সামাল দেওয়া মুশকিল। টিকাকেন্দ্রে বুধবার থেকে ভিড় বেড়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে টিকা শুরু হওয়ার পর এমন ভিড় হয়নি।
টিকাকেন্দ্রে বয়স্কদের অগ্রাধিকারের বিষয়ে নাবিল আহমদ বলেন, ভিড়ের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টের। তবে বয়স্কদের দেখলে আনসার সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে সিলেট নগরের মধু শহীদ এলাকার বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের পাশে বিদ্যালয়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে টিকাগ্রহীতাদের ভিড় থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকে ভিড় কিছুটা কম। অবশ্য বৃষ্টির কারণে কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের সংখ্যা কম বলে জানান দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের টিকাকেন্দ্রের ভেতরে যানবাহন প্রবেশে বাধা দিতে দেখা গেছে।
টিকা কার্ড যাচাইয়ের কাজে থাকা রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বৃহস্পতিবার টিকাকেন্দ্রে ভিড় ছিল। বুধবার থেকে কেন্দ্রে এমন ভিড় বলে জানান তিনি।
এদিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর আগে ৭ আগস্ট গণটিকা কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ ফারহানা মালেক।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের মধ্যে তিন জেলায় শুধু ৭ আগস্ট গণটিকা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর বাইরে সিলেট জেলার সিটি করপোরেশন এলাকায় তিন দিনব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গণটিকা কার্যক্রমে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৪ জনকে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসক সিধু সিংহ বলেন, বিভাগের তিনটি জেলায় মাত্র এক দিন গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এর বাইরে সিলেট জেলার শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় তিন দিনব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে সিনোফার্মের টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা টিকাকেন্দ্রে মুঠোফোনের খুদে বার্তা ছাড়া কাউকে টিকা দিইনি। এ জন্য অনেকে হয়তো টিকা পাননি।’ তাঁদেরও দুশ্চিন্তার কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপে তাঁদের খুদে বার্তায় টিকার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।