ট্রলারে শিশুর জন্ম, মা–সন্তান দুই জায়গায়
রাত থেকে প্রসববেদনা শুরু হয় শায়লা শারমিনের। হাসপাতাল দূরে হওয়ায় ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। কারণ, হাসপাতালে যাওয়ার একমাত্র পথ কপোতাক্ষ নদ। শীতের রাতে নদীপথে ঝুঁকি নিতে চায়নি পরিবারটি। দিনের আলো ফুটতেই কুয়াশার মধ্যে একটি ট্রলার ভাড়া করে শায়লাকে নিয়ে রওনা হন তাঁর স্বামী নুর হুসাইন। পাতাখালী গ্রাম থেকে যাত্রা শুরুর আধা ঘণ্টা পরই ট্রলারের মধ্যে জন্ম হয় শিশুর।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নে শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে। জন্মের পর থেকেই বারবার খিঁচুনি শুরু হয় নবজাতকের। এখন শিশুটি স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি। দিতে হচ্ছে অক্সিজেন।
সদ্য বাবা হওয়া নুর হুসাইন সন্তানের সঙ্গে আছেন। ফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই তাঁদের প্রথম সন্তান। ট্রলারের মধ্যে সন্তান প্রসব হওয়ায় তিনি ভয় পেয়েছিলেন। এখন আরও বেশি ভীত হচ্ছেন সন্তানের শারীরিক অবস্থায়।
মা শায়লা কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, গতকাল সকালেই ক্লিনিকে পৌঁছানোর পর মা ও সন্তানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে তাঁদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আজ শনিবার সকাল থেকে শিশুটির শারীরিক অবস্থা আবারও খারাপ হতে থাকে। তাই ক্লিনিকে নিয়ে এসেছেন। এখন মা ও সন্তান দুজনে দুই জায়গায়।
নুর হুসাইন প্রথম আলোকে জানালেন, বারবার খিঁচুনি দিয়ে নীল হয়ে যাচ্ছে তাঁর সন্তান। চিকিৎসক বেশ কিছু পরীক্ষার কথা বলেছেন। সেসবের এখনো কোনো রিপোর্ট আসেনি।
পাতাখালী থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে পৌঁছাতে হলে অতিক্রম করতে হয় অন্তত দেড় ঘণ্টার নদীপথ। নদীপথের এ দূরত্বের ঝুঁকি কমাতে সচ্ছল পরিবার নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে রাখেন সন্তানসম্ভবা নারীকে। সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলীয় অঞ্চলে অধিকাংশ প্রসবের ক্ষেত্রে এখনো স্থানীয় ধাই শেষ ভরসা। প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দিলে তাঁদের নিয়ে যেতে হয় স্থানীয় হাসপাতালে।
কখনো কখনো অপেক্ষা করতে হয় সকাল হওয়ার জন্য বা ট্রলার পাওয়ার জন্য। শারমিনের ক্ষেত্রেও এক রাত অপেক্ষার পর রওনা হতে হয়েছে। আরও আগে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো গেলে হয়তো মা আর সন্তান দুজনই সুস্থ থাকত বলে জানালেন নুর হুসাইন। বাচ্চাটি কবে সুস্থ হবে এবং ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে জানেন না তিনি।