ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি অজ্ঞাতনামা ৪৫০ থেকে ৫০০
ঠাকুরগাঁও সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার রুহিয়া সদর থানায় মামলাটি করেন নির্বাচনে দক্ষিণ আসান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তৌকির আহমেদ। মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকেই।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চতুর্থ ধাপে গত রোববার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর ইউপির দক্ষিণ আসাননগর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় ভোট গণনা সুষ্ঠু হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে সদস্য প্রার্থী ও রাজাগাঁও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম (ফুটবল প্রতীক) ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মোছা. লিপি বেগমের (হেলিকপ্টার প্রতীক) ৪৫০ থেকে ৫০০ জন সমর্থক কেন্দ্রে হামলা করেন। ইটপাটকেল ও লাঠি নিয়ে হামলা করে তাঁরা ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, ফলাফল শিট ও পুলিশ-আনসার সদস্যদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ভোট কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নিয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন।
একপর্যায়ে দরজা ভেঙে হামলাকারীরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন। সে সময় আত্মরক্ষায় পুলিশ একটি গুলি ছোড়ে। এতে হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ভোট কর্মকর্তারা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা সদরের দিকে রওনা দিলে হামলাকারীরা আবারও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ সে সময় ১৯টি গুলি ছোড়ে। এতে দক্ষিণ আসাননগরের বাসিন্দা হামিদুর রহমান (৬৫) নিহত হন। আহত হন আবু কালাম (৩২) নামের আরেক ব্যক্তি।
হামলার সময় আত্মরক্ষায় পুলিশ সে সময় ১৯টি গুলি ছোড়ে। এতে দক্ষিণ আসাননগরের বাসিন্দা হামিদুর রহমান (৬৫) নিহত হন। আহত হন আবু কালাম (৩২) নামের আরেক ব্যক্তি।
গতকাল রাতে কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৪৫০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে রুহিয়া থানায় মামলা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ঠাকুরগাঁও সদরের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক তৌকির আহমেদ।
মামলার পর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লোকজন। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া গ্রামের প্রায় সব দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। পরাজিত সদস্য প্রার্থী শাহ আলম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মোছা. লিপি বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি। বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা সকালেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন, তা তাঁরা জানাননি।
রাজাগাঁও ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম বলেন, মামলা হলেও যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না, তাঁদের কোনো ভয় নেই। ওই ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলামও গ্রামের বাজার ঘুরে মানুষকে সাহস দিয়েছেন।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তৌকির আহমেদ বলেন, ‘সদস্যপদে পরাজিত মো. শাহ আলম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মোছা. লিপি বেগমের সমর্থকেরা আমাদের ওপর হামলা করেছিল। তবে এ ঘটনা যে তাঁদের দুজনের নির্দেশেই ঘটেছে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। এ কারণে এজাহারে তাঁদের নাম আনা হয়নি।’
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।