ডলফিন মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের বিকল্প নেই

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পটুয়াখালীর বিভিন্ন সৈকতে ২১টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। এ নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ অ্যাকটিভিটির গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতির সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় কাজ করেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কী কারণে এত ডলফিন মারা যাচ্ছে?

সাগরিকা স্মৃতি
ছবি: সংগৃহীত

সাগরিকা স্মৃতি: নানা কারণে ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে। গত ২২ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ কারণে সমুদ্রের বন্ধু প্রাণী ডলফিন সমুদ্রে অবাধে বিচরণ করতে পেরেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যত্রতত্র জাল ফেলছেন। এতে ডলফিনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণত যেখানে মাছের বিচরণ বেশি, সেখানেই ডলফিন বিচরণ করে থাকে। আর মাছ যেখানে বেশি, জেলেরা সেখানে জাল ফেলেন। সেই জালে মাছের সঙ্গে ডলফিনও আটকে যায়। এ ক্ষেত্রে জেলেরা সচেতন হয়ে আটকা পড়া ডলফিন ছাড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তাঁরা তা করছেন না। মানুষের অসচেতনতার কারণে ডলফিন মারা যাচ্ছে।

এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রে প্রবল জোয়ার থাকে। এ সময় সমুদ্রে বিষাক্ত শৈবাল ও শামুক-ঝিনুক হয়। সামুদ্রিক মাছ এসব বিষাক্ত শৈবাল খায়। ডলফিন যদি ওই সব বিষাক্ত শৈবাল খাওয়া মাছ খেয়ে থাকে, তবে ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে। সুন্দরবন এলাকায় অনেক অসাধু জেলে বিষ দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। বিষ খাওয়া মাছ মরে সমুদ্রের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব মাছ পেটে গেলে ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে। সমুদ্রে চলাচল করা বড় জাহাজের আঘাতে ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে। সমুদ্রে যত্রতত্র ছেঁড়া জাল, পলিথিনে ভেসে বেড়াচ্ছে। এসবের সঙ্গে পেঁচিয়েও ডলফিনের মৃত্যু হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কুয়াকাটা-গঙ্গামতি সৈকতে এ পর্যন্ত কতগুলো মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে?

সাগরিকা স্মৃতি: জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২১টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। শুধু আগস্ট মাসেই ৮টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। গত বছরও ৭-৮টি মৃত ডলফিন ভেসে আসার খবর আমরা পেয়েছি। এই খবরে আমরা উদ্বিগ্ন।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিন
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ডলফিন রক্ষায় কী করা যায়?

সাগরিকা স্মৃতি: সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের সংখ্যা অনেক। জেলেদের সচেতন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জেলেদের বোঝাতে হবে, জালে ডলফিন, হাঙর, শাপলাপাতা মাছ, কাছিম–জাতীয় প্রাণী আটকা পড়লে ছেড়ে দিতে হবে। জেলেরা যাতে মাছ ধরতে গিয়ে ডলফিনের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করেন, তা তাঁদের বোঝাতে হবে। কীভাবে জালে আটকা পড়া প্রাণী ছেড়ে দিতে হবে, তার কৌশলও জেলেদের শেখানো দরকার।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: ডলফিনের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন কীভাবে করা যায়?

সাগরিকা স্মৃতি: ডলফিনের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে হলে ডলফিনের ময়নাতদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য মৃত ডলফিনের অন্ত্র, জিব, দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ দ্রুত সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ডলফিন কেন মারা যাচ্ছে, তা বের করতে হলে যথাযথ ময়নাতদন্ত ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার, ঢাকায় বন অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে ময়নাতদন্ত করা যায়। তা ছাড়া দেশে যে ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলো আছে, সেখানেও ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাহলে আমরা ডলফিনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানতে পারব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ডলফিন রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ সন্তোষজনক?

সাগরিকা স্মৃতি: বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ডলফিন রক্ষার দায়িত্ব বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। আগে এই উপকূলে ডলফিন রক্ষার ব্যাপারে তেমন তৎপরতা ছিল না। তবে একের পর এক ডলফিন মারা যাওয়ার খবরে বন বিভাগ ৯ সেপ্টেম্বর লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে, ১০ সেপ্টেম্বর কুয়াকাটা পৌর মিলনায়তনে এবং ১১ সেপ্টেম্বর কুয়াকাটার রাখাইন পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে জেলেসহ আড়তদারদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

সাগরিকা স্মৃতি: আপনাকেও ধন্যবাদ।