ডিবি পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে মারধরের অভিযোগ
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত নয়টার দিকে ইউনিয়নের ঢালীকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন হোসেনের লোকজন ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে রিপন বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য তাঁর নামে ডাহা মিথ্যা বলা হচ্ছে।
আহত ওই ব্যক্তির নাম বিল্লাল গাজী (৫০)। তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মহাসিনা হক ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য প্রার্থী রানু বেগমের সমর্থক। বিল্লাল গাজী দুই প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করছিলেন।
বিল্লালের স্ত্রী সেতু বেগমের ভাষ্য, গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে আসেন। এরপর তাঁরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর স্বামী বিল্লালকে তুলে নিয়ে যান। পরে বিল্লালকে বাড়ির পেছনের একটি জমিতে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় তাঁর স্বামীর পায়ে গুলি করা হয়েছে।
বিল্লালের স্ত্রী সেতুর অভিযোগ, ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রিপন হোসেনের ভাই শিপন ও নারী ইউপি সদস্য প্রার্থী ডলি বেগমের স্বামী রতন তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রানু বেগমের পক্ষে কাজ করায় ডলি বেগমের স্বামী রতনের সঙ্গে বিল্লালের শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। এদিকে রতন নৌকার প্রার্থী রিপন হোসেনের পক্ষেও নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছেন।
তবে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে জানান, নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য টঙ্গিবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। তবে গতকাল রাতে কারও বাড়িতে অভিযান চালানো হয়নি।
নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য আমার নামে ডাহা মিথ্যা বলা হচ্ছে। আমি কোনো রকম হানাহানি চাই না। আমার লোক কোনো রকম ঝামেলায় জড়ালে আমি নিজেই তাদের আইনের হাতে তুলে দিব।রিপন হোসেন, আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী
স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিনা হক অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু আমার সমর্থন করায় বিল্লাল গাজীকে নৌকার লোকজন বাড়ি থেকে তুলে এনে এভাবে মারধর করল। এভাবে নির্বাচন সম্ভব নয়। পুলিশ প্রশাসনকে বলেও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। ঢালিকান্দিতে আমার ভোট বেশি। তাই সেখানকার লোকজনকে ভয় দেখানো হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিপন হোসেন বলেন, ‘বিল্লাল গাজীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে শুনেছি, বিল্লাল নারী সদস্য প্রার্থী রানু বেগমের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেছিলেন। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য আমার নামে ডাহা মিথ্যা বলা হচ্ছে। আমি কোনো রকম হানাহানি চাই না। আমার লোক কোনো রকম ঝামেলায় জড়ালে আমি নিজেই তাদের আইনের হাতে তুলে দিব।’
এদিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গতকাল রাতে এক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোথাও গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি নেই। তাঁর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে ওই ঘটনা খবর পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ করছে।