ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌ দুর্ঘটনা
ডুবুরি নেই, উদ্ধারকাজ ব্যাহত
জেলায় ৬টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২১৯টি পদ আছে। কিন্তু কোনো স্টেশনে ডুবুরি পদ নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫১৭ কিলোমিটার নৌপথ আছে। প্রতিবছর নৌপথের বিভিন্ন স্থানে নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণত নৌকা বা ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এগিয়ে আসে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোতে ডুবুরি দল না থাকায় নৌ দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, জেলার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছয়টি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মকর্তা–কর্মচারীর ২১৯টি পদ আছে। কিন্তু এসব স্টেশনে কোনো ডুবুরির পদ নেই। জেলা শহরের অবস্থিত প্রথম শ্রেণির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম ১৯৬৪ সালে শুরু হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে নাসিরনগর, সরাইল, বিজয়নগর, নবীনগর, আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুর নদীবেষ্টিত। বর্ষাকালে এসব উপজেলার মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা এবং উপজেলা থেকে জেলা শহরে নৌপথে যাতায়াত করে। জেলায় প্রতিবছরই নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। জেলার দক্ষিণাংশের আখাউড়া, কসবা ও নবীনগরে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলে এবং নদী বা বিলে পড়ে কেউ নিখোঁজ হলে চাঁদপুর থেকে ডুবুরি দল আসে। আবার জেলার উত্তরাংশের সদর, বাঞ্ছারামপুর, আশুগঞ্জ, সরাইল, বিজয়নগর, নাসিরনগর উপজেলায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলে কিশোরগঞ্জ ও নারায়াগঞ্জ থেকে ডুবুরি দলকে ডাকা হয়। কিন্তু অনেক দূর থেকে আসে বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। নিখোঁজ মানুষের লাশ উদ্ধার করতে অনেক সময় লেগে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, বর্যাকালে জেলায় ৫১৭ কিলোমিটার নৌপথ দিয়ে লঞ্চ, ট্রলার, নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করে। শীত মৌসুমে জেলার এই নদীগুলোর মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ এলাকায় পানি থাকে এবং নৌযান চলাচল করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট স্ত্রী লিজা আক্তার (২৩) ও আট বছরের মেয়ে মারিয়া আক্তারকে নিয়ে নবীনগর উপজেলায় মামাশ্বশুরের বাড়িতে আসেন মো. রিয়াদ (৩৫)। পরদিন নৌকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন একই উপজেলার কাউতলা গ্রামের রিয়াদ। পথে বেলা একটার দিকে উপজেলার পূর্ব ইউনিয়নের মোহল্লা গ্রামে তিতাস নদে তাঁদের নৌকাটি ডুবে যায়। এতে রিয়াদ ও তাঁর স্ত্রী লিজা আক্তার মারা যান এবং তাঁদের সন্তান মারিয়া আক্তার নিখোঁজ হয়। প্রায় ২৯ ঘণ্টা পর ২৪ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরি দল তার লাশ উদ্ধার করে।
২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদের লইস্কা বিলে যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে ২৩ জন মারা যান। ওই দিন রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ২২ জনের লাশ উদ্ধার করে। জেলায় কোনো ডুবুরি দল না থাকায় ওই দিন ঘটনার পরপর দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি। পরে কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে ফায়ার সার্ভিস এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ডুবুরি দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরদিন সকাল আটটার দিকে উদ্ধার অভিযান চালান। ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দলের সদস্যরা এই নৌকাডুবিতে নিখোঁজ শিশু নাশরাহর (৩) লাশ উদ্ধার করেন।
২৭ আগস্ট নৌকাডুবির ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন স্থানীয় কবির মিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ অনেক পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এর আগে আমরা ১৮ থেকে ২০ জন পানিতে নেমে যাত্রীদের উদ্ধার করি। পানি থেকে অধিকাংশ লাশ আমরাই উদ্ধার করেছি।’
সামাজিক সংগঠন নোঙরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘জেলায় নৌকাডুবির ঘটনার পরদিন ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়।’
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের নিকলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরির ছয়টি ও চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরির তিনটি পদ রয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আটটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কোথাও ডুবুরির পদ নেই।
জেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো ডুবুরির পদ নেই। ২৭ আগস্টের নৌকাডুবির ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ডুবুরি দলের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশিষ্ট বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের পরিচালকের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডুবুরি স্থায়ীভাবে পদায়নের জন্য চিঠি লিখেছি।’