ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল
ডেন্টাল ইউনিটের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি নষ্ট, সেবা ব্যাহত
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানোর পরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে জনবল–সংকট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে দাঁতের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাঁরা পাচ্ছেন না যথাযথ চিকিৎসাসেবা।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডেন্টাল সার্জন মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অটোক্লেভ মেশিনের জন্য আবেদন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি অনেক দিন ধরে নষ্ট। এতে সাধারণ রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ অটোক্লেভ মেশিন দরকার। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান গত ৬ জানুয়ারি ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার (উপসচিব) এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর চিঠি দেন।
ওই চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার রোগী বহির্বিভাগে আসেন। এর মধ্যে ডেন্টাল বিভাগে প্রচুর রোগী আসেন। কিন্তু হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগের সিনিয়র টেকনিশিয়ান (যান্ত্রিক) মো. হাফিজুর রহমান হাসপাতালে আসেন। তিনি ডেন্টাল ইউনিটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান, ডেন্টাল কক্ষের এয়ার কমপ্রেসর পাওয়ার কাজ করে না, মোটরটি পুড়ে গেছে, প্রেসার কন্ট্রোল সুইচ ও পাওয়ার সার্কিট নষ্ট।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ডেন্টাল কক্ষে সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ডেন্টাল চেয়ার, বাতি (লাইট) ও কমপ্রেসর অকেজো হয়ে গেছে। সেখানে পানির সংযোগও নেই। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ডেন্টাল সার্জন মোছা. ফরিদা ইয়াছমিন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. নাজিম উদ্দিন মিলে ৯৭ জন রোগী দেখেছেন। এর আগের দিন সোমবার তাঁরা দুজন মিলে ১২৫ জন রোগী দেখেছেন। তবে এখানে দাঁতের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের জন্য এক্স-রে করার যন্ত্র নেই।
এদিকে হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের পদ রয়েছে একটি। আর মেডিকেল টেকনোলজিস্টের দুটি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। ফলে এখানে প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট আছে।
ডেন্টাল ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আসা রোগীদের রুট ক্যানেল, দাঁত ফিলিং ও দাঁত তোলা হয়। সপ্তাহে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার শুধু শিশু ও বয়স্ক রোগীদের দাঁত তোলা হয়। রুট ক্যানেল ও দাঁতের ফিলিং করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে দাঁতের সব ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতিসহ জনবল–সংকটে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার ফারুক মিয়া বলেন, ‘প্রচণ্ড দাঁতের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যাই। চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছেন। কিন্তু জেলার এত বড় হাসপাতালে দাঁতের এক্স-রে করার যন্ত্র নেই। এ ছাড়া ডেন্টাল ইউনিটের চেয়ার নষ্ট, বাতি কাজ করে না। নেই চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়ে দাঁত ফেলেছি।’
ডেন্টাল সার্জন ফরিদা ইয়াছমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় ডেন্টাল ইউনিটটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। নেই তেমন জনবল। শুধু শিশু ও বয়স্কদের দাঁত তোলার পাশাপাশি অন্য রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকি। ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখেছি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ডেন্টাল ইউনিটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।