জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণ দেখিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। সংগঠনটি সরেজমিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের সঠিক দূরত্ব মেপে বিআরটিএর নীতিমালা অনুযায়ী বাসভাড়া নির্ধারণ করার দাবি জানান। অন্যথায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের নতুন ভাড়া ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।
লিখিত বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ৩ নভেম্বর রাতে দেশে ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি এবং তা কার্যকর করে। অথচ বিগত সাত বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম থাকলেও তার সঙ্গে সমন্বয় করে বিপিসি তেলের দাম কমায়নি। গণশুনানিকে পাশ কাটিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নীতিমালার পরিপন্থী। এই সুযোগে বিআরটিএ নির্দেশনা ও আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই বাসমালিকেরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া ৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে। অন্যান্য রুটেও ভাড়া বৃদ্ধি করে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে এখানে পরিবহনমালিকেরা জনগণকে জিম্মি করার সুযোগ পাচ্ছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ২০১১ সালে পরিবহনমালিকেরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার দাবি করেছিলেন। পরে তাঁরা সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দাবি করেন। সে সময় আরটিসির চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিআরটিএ প্রতিনিধি, পরিবহনমালিক প্রতিনিধি ও যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের প্রতিনিধিদল সরেজমিন মেপে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত দূরত্ব পান সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। ২০১৩ সালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হওয়ার পর দূরত্ব দুই কিলোমিটার কমে সাড়ে ১৫ কিলোমিটারে দাঁড়ায়।
লিখিত বক্তব্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ৩ নভেম্বর রাতে দেশে ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি এবং তা কার্যকর করে। অথচ বিগত সাত বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম থাকলেও তার সঙ্গে সমন্বয় করে বিপিসি তেলের দাম কমায়নি।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ৭ নভেম্বর বিআরটিএ গণপরিবহনের ভাড়ার নতুন তালিকা ঘোষণা করে, যা কিলোমিটারপ্রতি দূরপাল্লার জন্য ১ টাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের জন্য ২ টাকা ১৫ পয়সা। সাধারণ মানুষের জন্য এই বর্ধিত ভাড়া অসহনীয় ও তাদের প্রতি এটি একধরনের নিষ্ঠুরতা। তারপরও এই মূল্যতালিকা অনুসরণ করলে এই রুটের ভাড়া দাঁড়ায় টোল ছাড়া ৩০ টাকা ৬২ পয়সা। ফ্লাইওভারের টোল যোগ করলে হবে ৩৫ টাকা ৮২ পয়সা। মেট্রোপলিটন রেট কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা ও টোল ৫ টাকা ২০ পয়সা ধরেও সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের ভাড়া আসে ৩৮ টাকা ৫২ পয়সা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এই রুটে বাসভাড়া নিয়ে বহুদিন ধরে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে চিহ্নিত মাফিয়া চক্রের বানানো পরিবহন সিন্ডিকেটের হাতে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ, এমনকি বাসমালিকও জিম্মি হয়ে রয়েছেন। তারা ২০১১ সালে বাসভাড়া বাড়িয়ে শহরে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ২০১০ সালে পরিবহনমালিকদের একটি সংগঠন সিন্ডিকেটের চাঁদা থেকে পরিত্রাণ পেতে র্যাব-১১ বরাবর লিখিত চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠিতে তারা কাকে কাকে কত টাকা চাঁদা দেয়, তা–ও উল্লেখ করেছিল। তাই আরটিসির চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসককে সরেজমিনে সঠিক দূরত্ব নিরূপণ করে বিআরটিএর নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান। অন্যথায় জনগণের ওপর অন্যায্য ভাড়া চাপিয়ে দিলে উদ্ভূত পরিস্থিতি হবে সব পক্ষের জন্য অশুভ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, সিপিবি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিমাংশু সাহা, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সমমনা সভাপতি দুলাল সাহা, বাসদ নেতা আবু নাঈম, সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলার সম্পাদক ধীমান সাহা প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্যসচিব ও বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) সৈয়দ আইনুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আরটিসির সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাসভাড়া ৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বেশি ভাড়া নেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।