ঢাকা-বগুড়া ৬ ঘণ্টার পথ যেতে ২৬ ঘণ্টা
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন বগুড়ার সৈকত হাসান। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কল্যাণপুর থেকে বাসে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। স্বাভাবিক সময়ে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে তাঁর বগুড়ায় পৌঁছানোর কথা। কিন্ত রাত পেরিয়ে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছেছেন।
ঢাকা-বগুড়ার ৬ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সৈকতের সময় লেগেছে প্রায় ২৬ ঘণ্টা। পথে দীর্ঘ যানজটের কারণে সৈকতের বাড়ি ফেরায় এই ভোগান্তি। শুধু সৈকত হাসান নন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে রাজধানী থেকে বগুড়ায় রওনা দেওয়া হাজারো মানুষ যাত্রাপথে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
বগুড়ায় এসে রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারিহা অনন্যা জানান যাত্রাপথে তাঁর দুর্ভোগের কথা। তিনি বলেন, বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি এসি বাসের বৃহস্পতিবার রাত ১১টার টিকিট কেটেছিলেন। সঙ্গে স্বামী ও দুই সন্তান। নির্ধারিত সময়ে কল্যাণপুর কাউন্টারে পৌঁছানোর পর জানানো হয়, যানজটের কারণে তাদের নির্ধারিত বাস এসে পৌঁছায়নি। এরপর টানা আট ঘণ্টা কাউন্টারেই বসে থাকেন তাঁরা। পরে সেই বাস শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে বগুড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
ফারিহা বলেন, গাজীপুরের চন্দ্রা আসতেই বিকেল গড়ায়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যখন পৌঁছান, তখন মধ্যরাত। শেষমেশ আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে বাস বগুড়ায় পৌঁছায়। কাউন্টারে বসে থাকা সময়টুকু ধরলে ঢাকা থেকে বগুড়ায় পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় ৩৪ ঘণ্টা।
ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের কথা জানান সংগীতশিল্পী মেজবাহ বাপ্পীও। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে তাঁর ১৮ ঘণ্টা লেগেছে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে। শনিবার সকাল হয়েছে গাড়িতেই।
ভোগান্তির চিত্র বগুড়া প্রান্তেও। ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসআর ট্রাভেলসের একটি বাসে টিকিট কেটেছিলেন বগুড়ার শফিক জামান। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সাতমাথা কাউন্টার থেকে বাস ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস ছেড়েছে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে। মাঝখানে ১২ ঘণ্টা সাতমাথা আর ঠনঠনিয়া কাউন্টারে বসে থাকতে হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের ভিড়। অনেকেই রাত থেকে কাউন্টারে বসে ছিলেন। এসআর ট্রাভেলসের সাতমাথা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাতায়াতকারী বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এতে শিডিউল বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। এমনও হয়েছে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রওনা দেওয়া বাস শনিবার দুপুর ১২টার দিকেও বগুড়ায় এসে পৌঁছায়নি।