শুষ্ক মৌসুম। নদী শুকিয়ে সরু খাল হয়ে গেছে। তবু নদীকে কেন্দ্র করে টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জেলেপাড়ার বাসিন্দারা। সারা রাত জাল টেনেও মাছ মেলে কম। সংসারের খরচ বেড়েই চলেছে।
এই দুরবস্থা কুড়িগ্রামের উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের নিরা মাঝির পরিবারের। জানুয়ারির শীতেও ছেলে রাম চন্দ্রকে নিয়ে ধরলা নদীতে সারা রাত জাল টানেন। তাতে ৩০০ টাকার মাছও হয় না। সংসার চার সদস্যের। হতাশ নিরা মাঝির বক্তব্য, ‘খাটনি বৃথা। বাধ্য হয়ে জাল বস্তাত ভড়ে থুবার নাগছি। ঢাকা যাম অন্য কাম করবার। প্যাট তো চলা নাগবে।’
হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর দাগারকুটি জেলেপাড়ায় প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস। জেলেদের ভাষ্য, একটা নৌকা তৈরি করতে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা লাগে। জালের দাম ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ। মহাজন বা এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা বানানো হয়। বর্ষা মৌসুমে ভালো মাছ পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে দিন খারাপ যায়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে হাতিয়া ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, জাল শুকাতে দিয়েছেন জেলেরা। আর ঘাটে সারি সারি মাছ ধরার নৌকা বাঁধা। একটি নৌকায় বসে টুকটাক কাজ করছিলেন লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস।
বর্তমান অবস্থার কথা জানতে চাইলে লক্ষ্মণ বলেন, সারা রাত কষ্ট করে তেলের খরচও ওঠেনি। বাধ্য হয়ে জাল শুকাতে দিয়েছেন। বাড়িতে নিয়ে যাবেন। দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। নদীতে মাছ নেই বললেই চলে।
নদীর পাড়ে জাল শুকাচ্ছিলেন স্বদেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বর্তমানে নদীতে মাছ কম থাকায় জেলেপাড়ার সব জেলেরই করুণ অবস্থা। যাঁদের শরীরে জোর আছে, তাঁরা দিনমজুরি করতে জেলার বাইরে গেছেন। বাকিরা বাড়িতে বসে আছেন।