তিন গুণের বেশি ভাড়ায় কাজে ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকেরা
করোনার কারণে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ভোগান্তি ও তিন গুণের বেশি বেশি ভাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জের পোশাকশ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরী ও আদমজী ইপিজেডসহ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। তবে অনেক কারখানার শ্রমিকেরা এখনো ফিরতে পারেননি।
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আসতে দেখা গেছে। শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ১ হাজার ২০৪টি কারখানায় শ্রমিক উপস্থিতি ৭০ শতাংশের বেশি।
পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফকির অ্যাপারেলসে সুইং সেকশনে কাজ করেন আলেয়া বেগম। তাঁর গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি গতকাল শনিবার জামালপুর থেকে ভেঙে ভেঙে অনেক কষ্ট করে এক হাজার টাকা খরচ করে নারায়ণগঞ্জে আসেন। তিনি বলেন, ৩০০ টাকা হলেই জামালপুর থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জে আসতেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের নোটিশ পেয়ে বিধিনিষেধের মধ্যে তাঁকে তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ, চাকরি চলে গেলে খাব কী?’
এম এস ডাইং অ্যান্ড নিট কম্পোজিট কারখানায় সুইংয়ের কাজ করেন হাসিবুল ইসলাম। কারখানা খোলার জরুরি নোটিশ পেয়ে ঝিনাইদহের গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা হয়ে গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জে আসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে কারখানা খোলার ঘোষণা দেওয়ায় তাঁদের ফিরতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শ্রমিকদের আসার জন্য কোনো যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এভাবে কি লাখ লাখ শ্রমিকের কাজে ফেরা সম্ভব? তাঁর কথা, ‘আমাদের ভোগান্তির কথা মালিকও চিন্তা করে না, সরকারও চিন্তা করে না।’
ফকির অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক দেওয়ান আবু তাহের বলেন, ‘শনিবার সকালে রওনা দিয়ে রাত তিনটার দিকে ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জে আসতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা।’
শ্রমিকদের অভিযোগ, বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। এ কারণে তাঁদের ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরতে হয়েছে। তাঁদের তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ভোগান্তি নিয়ে কাজে ফিরতে হয়েছে। অনেক শ্রমিক যানবাহন না পাওয়ায় পথে আটকা পড়ে আসতে পারেননি বলে তাঁরা জানান।
এদিকে আজ সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে করে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ফিরতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, হাইয়েস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে শ্রমিকদের আসতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪–এর পরিদর্শক (গোয়েন্দা) শেখ বশির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আদমজী ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীসহ মোট পোশাক কারখানা আছে ১ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কারখানা চালু হয়েছে ১ হাজার ২০৪টি। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ৭০ শতাংশ। তিনি বলেন, অনেক শ্রমিক পথে আছেন। তাঁরা ফিরছেন।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দূরপাল্লার কিছু যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। সেগুলো দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আসছেন। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ একেবারে কম।