তিন সমস্যায় শিক্ষার্থীরা, সমাধানের উদ্যোগ নেই

এখনো ক্যাম্পাসে পরিবহন–সংকট, অপর্যাপ্ত খাবারের দোকান এবং ধীরগতির ইন্টারনেটের সমস্যা রয়ে গেছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত ২ নভেম্বর থেকে সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যেসব সমস্যা ছিল, সেসব এখনো আগের মতোই আছে। এসব সমাধানে কর্তৃপক্ষও খুব একটা আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে পরিবহন–সংকট, অপর্যাপ্ত খাবারের দোকান এবং ধীরগতির ইন্টারনেটের সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমানে ছয়টি অনুষদ ও দুটি ইনস্টিটিউটের অধীনে ২৮টি বিভাগে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের পরিবহনে কোনো সংকট নেই। তাঁর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৪টি নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। কোভিডের আগে যেসব টংদোকান ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল, সেসব জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর ছিল। এসবের বদলে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ফুডকোর্ট চালু করা হবে। একটা সময় সব শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করত না, এখন সবাই ব্যবহার করছে। ফলে ইন্টারনেটে ধীরগতি হচ্ছে।

পরিবহনের তীব্র সংকট

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকেন। এর বাইরে বাকি সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে সব মিলিয়ে গাড়ি আছে ৩৬টি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ১১টি বাস বরাদ্দ থাকলেও চালক–সংকটে বর্তমানে সাতটি বাস পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন সাতটি নির্দিষ্ট সময়ে এসব বাস সিলেট নগর ও শহরতলির ১৪টি স্থান থেকে শিক্ষার্থী পরিবহন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থী ছাড়া আরও অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকায় বসবাস করছে। ফলে তাদের পরিবহনে বাস লাগছে না। বাকি শিক্ষার্থীদের চলাচলে সংকট থাকলেও তা দূর করার চেষ্টা চলছে।

ধীরগতির ইন্টারনেট

পুরো ক্যাম্পাস ইন্টারনেটের আওতায় আনার জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। এগুলো হচ্ছে ল্যান ও এক্সেস পয়েন্ট (রাউটার) পদ্ধতি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা রাউটার বা এক্সেস পয়েন্টের (এপি) মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে ২৫০টি এপি আছে। এর মধ্যে ছাত্রদের তিনটি ও ছাত্রীদের দুটি আবাসিক হলে রয়েছে ১৫০টি এপি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সর্বনিম্ন ২০ কিলোবাইট থেকে সর্বোচ্চ ২০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট সুবিধা শিক্ষার্থীদের পাওয়ার কথা। কিন্তু আবার বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর থেকে ধীরগতি ও দুর্বল ফ্রিকোয়েন্সির কারণে ইন্টারনেট

ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েছেন। এতে অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত ও অনলাইনে বইয়ের পিডিএফ খোঁজার জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদের খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

শাবিপ্রবির কম্পিউটার ও ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মো. মাসুম বলেন, একটা এক্সেস পয়েন্টে নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তি ইন্টারনেট যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যখন এর পরিমাণ বেড়ে যায়, তখনই ইন্টারনেটের গতি দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দীর্ঘ দুই বছর আবাসিক হল বন্ধ থাকায় অনেক এক্সেস পয়েন্ট অব্যবহৃত থাকতে থাকতে বিকল হয়ে পড়েছে। তাই সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগির তা দূর হবে।

টংদোকানের সংকট

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে টংদোকান ছিল ১৬টি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নিরাপত্তা ও প্রধান সড়ক পরিষ্কার রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাডেমিক ভবন-বি-এর পাশের ৪টি টং অপসারণ করে। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১৮ মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ভবন-সি

এবং ভবন-ই-এর পাশের ১২টি টং বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় আবার চালু হলেও এসব টং চালুর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, ক্যাফেটেরিয়া, ক্যানটিন, ফুডকোর্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন টংদোকান পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়েছে। তবে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সুপরিসর, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি ফুডকোর্ট জোন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজও শেষ হবে। খাবারের মান ও পরিবেশনা যেন ভালো থাকে, সেটি নিশ্চিত করা হবে। এ ফুডকোর্ট–জোনে চারটি দোকানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বসার পর্যাপ্ত স্থান থাকবে।