গতকাল রাত ১০টার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে আলী আমজদের বোন ফারজানা আক্তার (১৬) ও তাঁর মা পপি আক্তারের (৪৫) সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, আলী আমজদকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশী মকবুল আলীর ছেলে সামাদসহ তাঁর সহযোগীরা পাশের গ্রামে নিয়ে নির্যাতন করেছেন।
আলী আমজদকে নির্যাতনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলী আমজদকে বেশ কয়েকজন তরুণ সড়কে ফেলে রেখেছেন। এ সময় আলী আমজদকে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন এবং তাঁর মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে। তাঁকে ঘিরে ধরা লোকজনের মধ্যে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মরে গেলে বিপদ হবে...।’ একপর্যায়ে আলী আমজদকে পাঁচ থেকে ছয়জন তরুণ অচেতন অবস্থায় হাত-পা ধরে তুলে নিয়ে আরেকটি জায়গায় সড়কের ওপর ফেলে রাখে। পরে তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে আলী আমজদের বাড়ির দিকে যাওয়া হয়। এ সময় ওই তরুণদের বলতে শোনা যায়, ‘বাড়ির সামনে নিয়ে যাও।’
আলী আমজদের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে নির্যাতনকারীরা ফারজানা আক্তারকে (১৬) ছুরিকাঘাত করেন। পরে সে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
আলী আমজদের বাবা শফিকুর রহমান বলেন, কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশী সামাদ, সাদ্দাম ও তাঁর ভাই মনসুর, মুস্তাকিমের পাশাপাশি কয়েকজন তাঁর ছেলেকে সড়কে ফেলে নির্যাতন করেছে। এরপর প্রতিবেশীরা তাঁদের বাড়িতে নিয়ে আলী আমজদকে বেঁধে রাখেন। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে অভিযোগ জানানো হলে পুলিশ তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
শফিকুর রহমানের দাবি, জমিসংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে ২৪ জুলাই প্রতিবেশী সামাদ তাঁর বাড়িতে ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ২৮ জুলাই সামাদ ও তাঁর পরিবারের লোকজনের নামে তাঁর স্ত্রী মামলা করেছিলেন। এর কয়েক দিন পর আবার সামাদের পরিবারের লোকজন তাঁর পরিবারকে আসামি করে মামলা দিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সামাদের চাচাতো ভাই সাদ্দাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আলী আমজদ ওরফে মারুফকে তাঁরা মারধর বা নির্যাতন করেননি। কবুতর চুরির ব্যাপারে তাঁরা শুধু ‘ভয়–ভীতি’ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও তাঁদের কাছে আছে। মারুফ কবুতর চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
আলী আমজদের বোনের হাতে ছুরিকাঘাতের অভিযোগের বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, তাঁরা কাউকে ছুরিকাঘাত করেননি। এটা সাজানো ঘটনা।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে কবুতর চুরির সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। তবে কে বা কারা মারধর করেছে সেটি আমরা জানি না। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর থেকে ফোন পেয়ে ওই তরুণকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে নাম–পরিচয় জানার পর দেখা গেছে, তাঁর নামে চুরির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’