মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রজতরেখা নদীর উৎসমুখে মাটির বাঁধ দিয়ে বানানো হয়েছে রাস্তা। সেই রাস্তায় আনা–নেওয়া করা হয় মাটি। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নদীর প্রবাহ। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী নদীটি।
অভিযোগ উঠেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের ছোট ভাই ইসমাইল ব্যাপারী নদীর উৎসমুখ ভরাট করেছেন। আর তাঁর চাচাতো ভাই শাহাদাত ব্যাপারী ও তাঁর অনুসারীরা নদীর দুই পাশ দখল করে চলেছেন।
মঙ্গলবার সকালে দীঘিরপাড় বাজারের পূর্ব পাশে দেখা যায়, নদীর উৎসমুখ মাটি দিয়ে ভরাট করে চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে। নদীর মধ্য থেকে ১৫–২৫ জন মাটি কেটে ট্রলিতে তুলছেন। পানিশূন্য নদীটিতে বড় বড় গভীর গর্ত।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে রজতরেখা নদী। একসময় নদীটি ৪৮০ ফুটের মতো চওড়া ছিল। তবে বর্তমানে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নদীটি কোথাও ৩০ ফুট, ৪০ ফুট বা ৫০ ফুটের মতো চওড়া।
স্থানীয়রা বলেন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় থেকে বেশনাল, পুরাবাজার, সদর উপজেলার শিলই, মাকাহাটি, কাঁটাখালী হয়ে মুন্সিগঞ্জ শহরে ধলেশ্বরীতে মিশেছে ১২ কিলোমিটারের এই নদী। দুই দশক আগেও নদীটি প্রবহমান ছিল। নদীর পূর্ব পাশে মুন্সিগঞ্জ সদর ও পশ্চিম পাশে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা। বর্ষাকালে এই নদী কানায় কানায় পূর্ণ থাকত। প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। এই নদী দিয়ে ছোট বড় লঞ্চ–স্টিমার, ট্রলার, মালবাহী নৌকা চলাচল করত। তবে দখলের কারণে নদীটি অস্তিত্ব হারিয়েছে।
জানতে চাইলে ইসমাঈল ব্যাপারী বলেন, ‘রজতরেখা নদীর ওপর দীঘিরপাড় বাজার। এখন যে অংশ নদীর মতো দেখা যাচ্ছে তা আমাদের রেকর্ডীয় সম্পদ।’
দখলের বিষয়ে শাহাদাত ব্যাপারী বলেন, তিনি রজতরেখা নদী দখল করেননি। যেখানে তিনি ভরাট করে ব্যবসা করছেন, সেটা তাদের রেকর্ড করা সম্পদ। ভাঙনের কারণে এটি নদীর মতোই মনে হচ্ছে।
শিলই ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, তিনি নদী দখল করেননি। তার দুই ভাইয়ের মতো তিনিও এটিকে নিজেদের রেকর্ডীয় সম্পদ দাবি করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যদি নদী দখল হয়ে যায়, উচ্ছেদ না হয়; তাহলে নদীর প্রবাহ কমে গিয়ে দখলের পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে। একটি জেলায় জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএর লোকজন থাকার পরও নদী দখল হয়ে যাবে, এটা মানা যায় না। নদী দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জেলা প্রশাসককে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে খনন প্রয়োজন, সেখানে খনন করে প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নদীর উৎসমুখ খনন করা হবে। প্রথমে নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। নদীর প্রশস্ততা ফিরিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে।
জেলা প্রশাসক নাহিদ রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি কিছুদিন আগে জানতে পেরেছি। খাল ও নদী কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এগুলো সরকারি সম্পদ। দুই উপজেলার সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। যারা নদী দখল ও মাটি বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নদী ও খালের প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।’