দাকোপে ট্রলারে করে এসে উৎসবমুখর পরিবেশে স্কুলশিক্ষার্থীরা নিল টিকা

খুলনার দাকোপ উপজেলায় করোনা টিকা নিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। বুধবার দুপুরে দাকোপের চালনা সদরের মেরিনঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন দাকোপ উপজেলায় স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ৫ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর তালিকা করা হলেও শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় গত তিন দিনে ৮ হাজারের ওপর শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে টিকা আনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

দাকোপে স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পড়ে। লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে হলেও হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী কষ্ট ভুলে হাসি মুখে টিকা নিয়েছে। এতে টিকা নেওয়া উৎসবের পরিবেশে রূপ নেয়।

বিদ্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দাকোপের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপজেলা সদরের চালনায় এসে টিকা নিতে হয়েছে। ১০ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। উপজেলায় প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়। স্কুলপর্যায়ে শতভাগ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা গেছে বলে দাবি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দাকোপের কলেজশিক্ষার্থীদের এখনো টিকা দেওয়া হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে তাদের করোনা টিকা দেওয়া শুরু হবে। আর এমপিওভুক্ত না এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে এখনো টিকা দেওয়া যায়নি। একটা বিশেষ প্রোগ্রাম করে তাদের টিকা দেওয়া হবে।

৫ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর তালিকা করা হলেও শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় গত তিন দিনে ৮ হাজারের ওপর শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে আজ বুধবার স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার শেষ দিনে দাকোপ উপজেলা সদরে দেখা যায়, সদরের চালনা পৌরসভার মেরিনঘাট এলাকায় টিকা নেওয়ার জন্য শত শত শিক্ষার্থী অপেক্ষা করছে। ওই ঘাটে অন্তত ১০টি ট্রলার ভেড়ানো রয়েছে। মূল সড়কের ওপর কয়েকটি লাইন হওয়ায় সেখানকার যান চলাচল প্রায় বন্ধই ছিল। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন কার্যালয়ে উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের আজ টিকা দেওয়া হয়। ওই দুই ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের খারাপ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নদীপথেই ট্রলারযোগে সদরে আসে। শিক্ষকেরা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকেরা কাগজপত্র ঠিকঠাক করা এবং নিজেদের শিক্ষার্থীদের তদারকিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে ছিল। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। হকাররা সেখানে নানা পদের খাবারও ফেরি করছিলেন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল পরিবেশ।

নলিয়ান আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে নিয়ে এসেছি। সকাল সাতটায় আমরা বের হয়েছি। ঘণ্টা তিনেকের পথ ট্রলারে পাড়ি দিয়ে এখানে পৌঁছেছি। সাড়ে ১২টা থেকে আমাদের সিরিয়াল শুরু হয়েছে।’

খারাপ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নদীপথে ট্রলারযোগে সদরে আসে। শিক্ষকরা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের। বুধবার দুপুরে দাকোপের চালনা সদরের মেরিনঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

লম্বা লাইনে দাঁড়ানো নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কালাবগী গ্রামের অলিউল্লাহ ইসলাম বলে, ‘আমরা আমাদের স্কুল থেকে তিনটা ট্রলারে এসেছি। সকাল সাতটায় সবাই ট্রলারে উঠেছি। দশটার দিকে এখানে পৌঁছেছি। তারপর থেকে লাইনে আছি। টিকা নিতে পারছি জেনে ভালো লাগছে। সবাই একসঙ্গে, এখানে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুতারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুলের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। আমরা কয়েকটা ট্রলারে এসেছি। আসা-যাওয়া এবং দুপুরের খাওয়া বাবদ স্যাররা ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। টিকা নিতে পারছি, পিকনিক পিকনিক মনে হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে তদারকি করছিলেন কালাবগী সুন্দরবন আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জি এম শহীদুল্লাহ বলেন, ‘১৮০ জন শিক্ষার্থীকে আমরা ট্রলারে করে নিয়ে এসেছি। টিকা দেওয়া শেষে আবার সবাইকে নিয়ে যাব।’ সেখানে উপস্থিত অন্য একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সদরে এসে টিকা নেওয়াটা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টের। এটা ইউনিয়ন পর্যায়ে দিলে ভালো হতো।

দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সে অনুয়ায়ী আমরা শতভাগ টিকা দিয়ে ফেলেছি। আমাদের টিকার কিছুটা সংকট ছিল। ৫ হাজার ৮০০ জনের একটা তালিকা স্কুলগুলো থেকে আমরা পেয়েছিলাম। অন্য জায়গা থেকে টিকা এনে এরই মধ্যে আট হাজারের ওপর শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়েছে।’