দিনাজপুরে দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক ‘বেপরোয়া’ চালাচ্ছিলেন
দিনাজপুরে গতকাল সোমবার রাতে যে বাস দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, চালক সেটি বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিক্তা আক্তার (২৩) নামের এক যাত্রী আজ মঙ্গলবার বলেন, চালক বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন। যাত্রীরা আস্তে চালানোর জন্য বললেও তিনি কথা শোনেননি।
রিতা ঠাকুরগাঁও থেকে পাঁচ দিন বয়সী সন্তানকে নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আহসান পরিবহনে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন রিতার শ্বশুর আকবর আলী ও শাশুড়ি সোনাবানু। রাত ৯টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার রামডুবি ব্যাংকালী এলাকায় বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
রিতা বলেন, তাঁর ডান পায়ের ঊরুতে লোহার রড ঢুকে যায়। তাঁর সন্তানের মাথা ও পায়ে আঘাত লাগে। তিনি ও তাঁর নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রিতাসহ বিভিন্ন বয়সী ১৯ জন আহত ব্যক্তি এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন।
নিহত তিনজন হলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আবদুর রহিম (৪২), বোদা উপজেলার থানাপাড়া গ্রামের রাকিবা বেগম (২১) ও বাসের চালকের সহকারী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার সেকেন্দার আলী (২৫)।
হাসপাতালে রিক্তা আক্তার বলেন, জন্মের পরের দিন তাঁর নবজাতক মেয়ের খিচুনি হয়। পঞ্চগড় থেকে মেয়েকে নিয়ে আসেন ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে। গতকাল সন্ধ্যায় রংপুর যাওয়ার জন্য ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তা থেকে ওই বাসে উঠেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘বাসটি জোরে চালাচ্ছিলেন চালক, বেপরোয়াভাবে। পেছন থেকে যাত্রীরা গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য বলতেছিলাম। তিনি কারও কথাই শুনছিলেন না। এমন জোরে চালাচ্ছিলেন যে সামনের সিটে বারবার ধাক্কা খাচ্ছিলাম। মেয়ে আমার কোলেই ছিল। দুর্ঘটনার সময় কোল থেকে মেয়ে নিচে পড়ে যায়। আমার মাথায় জোরে ধাক্কা লাগে। পরে মেয়েকে কোলে তুলে নিতে পেরেছি।’
বাস দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় তিনটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আল হেলাল বলেন, আহসান পরিবহনের বাসটি দশমাইল হাইওয়ে থানা হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় দশমাইল হাইওয়ে থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। বাসের চালক পলাতক।
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবু রেজা মো. মাহমুদুল হক বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১৯ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন অনেকেই। এখন সাতজন চিকিৎসাধীন। তবে তাঁরা আশঙ্কামুক্ত।