দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, গুলিবর্ষণের পর আ.লীগের সম্মেলন পণ্ড

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে স্থানীয় দুটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা গুলিবর্ষণ করায় সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের সরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফোরকান আহমদ (৫৫), আবুল হাশেম (৩৫), মানিক উদ্দিন (৩২) ও বাদশাহ মিয়ার (২৫) নাম জানা গেছে। ফোরকান আহমদ ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া মানিক উদ্দিন ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাদশা মিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক লীগের সভাপতি পদে দায়িত্বে আছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার সরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আলম। সম্মেলনে উদ্বোধক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ব্রজগোপাল ঘোষ। ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রহমত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বক্তব্য দেন ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ। এ সময় তিনি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হন। এরপর দুর্বৃত্তরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করলে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। পরে এই ঘটনায় স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ দায়ী করে স্থানীয় ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।

কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আহসান উল্লাহ তাঁকে জড়িয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আতঙ্ক বেড়ে গেলে লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত আহসান উল্লাহ গ্রুপের লোকজন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ফোরকান আহমদ ও আবুল হাশেমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আহসান উল্লাহ বলেন, কামরুল হাসানের লোকজন তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা করেছেন। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গুলিবর্ষণ করলে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। এই ঘটনায় তাঁর পক্ষের মানিক উদ্দিন ও বাদশা মিয়া নামের দুই ব্যক্তি আহত হন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

মুঠোফোনে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সম্মেলন প্রাঙ্গণে কে বা কারা গুলিবর্ষণ করেছে বলে শুনেছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।