দেবীগঞ্জে ইউএনওকে হুমকি দেওয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) খাগড়াছড়ি-বান্দরবানে পাঠানোর হুমকি দেওয়া পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আজগর আলীর নামে মামলা হয়েছে। দলবল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলার অভিযোগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মামলাটি করেন দণ্ডপাল ইউপি নির্বাচনের বিনয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ।
মামলায় নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও দণ্ডপাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজগর আলী (৬৫), দণ্ডপাল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেনসহ (৩৭) ৯ জনের নামে উল্লেখ করে জ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হয়ে ভোটকেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা, সরকারি কর্মচারীকে আক্রমণ, সরকারি কাজে বাধাদান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে নির্বাচনে জয়ের পর গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি সভায় দেওয়া বক্তব্যে আজগর আলী দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ি-বান্দরবানে পাঠানোর হুমকি দেন। তাঁর সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৫ জানুয়ারি) দণ্ডপাল ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে বিনয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়। সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে সাতটার দিকে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আজগর আলী তাঁর লোকজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তাঁরা ভোট গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে থাকেন।
এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাধা দিলে অবৈধভাবে প্রবেশকারীরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা বেতার বার্তায় সাহায্য চাইলে রাত ৭টা ১০ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা সেখানে গিয়ে মৃদু লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
পরে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার মাধ্যমে ওই কেন্দ্রেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে সামগ্রিক ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন। এমনকি তাঁর এই হুমকি–ধমকি দেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও আসামিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন।
দেবীগঞ্জ থানার ওসি মো. জামাল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে মামলা হওয়ার বিষয়ে মো. আজগর আলী সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সরকারি দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলাম। আমার মধ্যে কখনো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা ছিল না। আমি বা আমার লোকজন ভোটকেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ করেনি।’ তিনি আরও বলেন, বিনয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যখন ভোটের ফলাফল দিতে কর্মকর্তা দেরি করছিলেন এবং ব্যালট বাক্স উপজেলা পরিষদে নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করবেন বলছিলেন, তখন বাইরে ভোটাররা কেন্দ্রটিকে ঘিরে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ প্রশাসন এসে সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা করে।