করোনা মোকাবিলার নির্দেশনা দুই–এক দিনের মধ্যে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মানিকগঞ্জে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায়
প্রথম আলো

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নির্দেশনা আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হবে। এই নির্দেশনা চলে আসবে। বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেস্তোরাঁয় টিকার কার্ড নিয়ে যেতে হবে। বাইরে বের হলেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

আজ শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠান, যেমন বিয়ে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যে ক্যাপাসিটি আছে, এর থেকে বেশি মানুষের উপস্থিতি থাকা যাবে না। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। এমনকি কারাদণ্ডও দেওয়া হতে পারে। দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলোতে মাস্ক ছাড়া বেচাকেনা করলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই জরিমানা হবে। এ ছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এমনকি কারাদণ্ডও হতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এখন অনেক দেশে অমিক্রণের সংক্রমণ বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে ১০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ইউক্রেনের মতো ছোট একটি দেশে প্রত্যেক দিন দেড় লাখের মতো মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এখন ভারতেও সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। অনেক শহরে কারফিউ দেওয়া হচ্ছে, বিধিনিষেধ দিচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠান, যেমন বিয়ে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যে ক্যাপাসিটি আছে, এর থেকে বেশি মানুষের উপস্থিতি থাকা যাবে না। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যে নির্বাচনে মিটিং–মিছিল হচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। এতে দেশ হুমকির মধ্যে পড়বে। দেশের সব কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের জাতীয় কারিগরি কমিটির নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। এই নির্দেশনাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করছেন। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে জেলা পর্যায়ে এই নির্দেশনাগুলো চলে আসবে এবং তা কার্যকর হয়ে যাবে। সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলা জনগণের দায়িত্ব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সারা পৃথিবী আজ করোনায় আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তুলনামূলক অনেক ভালো রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে ১৭ কোটি মানুষ বসবাস, এরপরও সুন্দরভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর ফলে আজ দেশে অর্থনীতি ভালো আছে, জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সচল রয়েছে।

দেশে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখার জন্য জেলা ও উপজেলায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এসব কর্মকর্তা এখন প্রস্তুত। যদি রোগী বাড়ে, তাহলে তাঁরা চিকিৎসা দিতে পারবেন। অক্সিজেন, ওষুধ আছে এবং চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত আছেন। তাঁরা এখন অভিজ্ঞ। তাঁরা ডেলটা ধরনের সময় যে চিকিৎসা দিয়েছিলেন, সেই চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। দেশে হাসপাতালগুলোতে ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু ২০ হাজারের স্থানে রোগী যদি দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাহলে শয্যা-সংকটের আশঙ্কা থাকেই। এ জন্য অমিক্রন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে। আপাতত সেটা বজায় থাকবে। তবে সংক্রমণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন চিন্তাভাবনা করব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না খোলা থাকবে। যদি সংক্রমণ বাড়ার কারণে হুমকি দেখা দেয়, তখন তা বন্ধের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। তবে এখনো পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে যায়নি। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো অনেকে টিকা নেননি। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁরা টিকা নেবেন। টিকা নেওয়ার কারণেই মৃত্যু হার কম। দেশে প্রায় সাড়ে সাত কোটি প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে পাঁচ কোটি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়েও টিকা দেওয়া হচ্ছে। চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে তিন থেকে চার কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জনগণ টিকা নিলে এই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে।