দেড় মাস ধরে সহস্র পরিবারের পানির মধ্যে বসবাস

জলাবদ্ধতার কারণে দেড় মাস ধরে পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে কেষ্ট সরকারকে। আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদুরডেঙ্গী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘আর বোলো না। এর নাম পৌরসভা। দেড় মাস ধরে ডুবে রয়েছি। একবার মেয়র কিংবা কাউন্সিলর আসেনি দেখতে। পানিতে কাঁচা ঘরের দেয়াল পড়ে গেছে। এ বয়সে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে।’

এই আক্ষেপ বৃদ্ধ কেষ্ট সরকারের। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদুরডেঙ্গী গ্রামে। লাঠিতে ভর দিয়ে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রথম আলোকে তিনি আরও বলেন, ‘এক বেলা জুটলে আর এক বেলা জুটতেছে না। তোমরা এসে ছবি নেও, তা কিছু করতে পারো না, যাতে পানি সরে যায়।’


সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুদুরডেঙ্গী এলাকা। সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর দুই ফুট পানি। চারদিকে সব পানি থইথই করছে। কিছু পরিবারের ঘরের মধ্যে পানি না থাকলেও বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি। সবাই ঘরের মধ্যে বন্দী জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থা সুদুরডেঙ্গী থেকে সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা পর্যন্ত। এই এলাকার হাজারখানেক পরিবার দেড় মাস ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছে। গত ২৬ থেকে ২৮ জুলাই তিন দিনের অতিবৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হতে পারায় এ দশা এলাকার মানুষের।

মাছখোলা গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, এসব এলাকার পানিনিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ করে মানুষ অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করেছে। ফলে পানিনিষ্কাশন হতে পারছে না। পাশাপাশি বেতনা নদী ভরাট হয়ে নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। এ কারণে মানুষের এই দুর্দশা। এ সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই। রোদে পানি শুকানো ছাড়া এলাকার মানুষ এ দশা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

সুদুরডেঙ্গী গ্রামের মহসিন হোসেন বলেন, ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি মাচা করে বসবাস করছেন। ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি রেখে এসেছেন। করোনার মধ্যে কাজ করতে পারেননি। কী খাবেন তার ঠিক নেই। পানির মধ্যে বন্দী হয়ে এভাবে চলছে দেড় মাস ধরে।

একই এলাকায় কুলিনপাড়ার নবদ্বীপ সরকারের উঁচু ভিটায় পাকা বাড়ি। চারদিকে পানি ঘিরে রেখেছে বাড়িটি। দুই থেকে তিন ফুট পানির মধ্যে এখানে ৩২ পরিবার একপ্রকার ডুবে রয়েছে। নবদ্বীপ জানান, ঘর থেকে কেউ বের হতে পারে না। শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির মধ্যে চলতে চলতে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষের পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে।

বাড়ির উঠানেও জমেছে পানি। আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদুরডেঙ্গী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ বলেন, মানুষ অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে ড্রেনেজব্যবস্থা না করে। পাশাপাশি মাছের ঘের করে পানিনিষ্কাশনের খালগুলো দখলে রেখেছে ঘেরমালিকেরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা বেতনা নদী ভরাট হয়ে এসব এলাকার চেয়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে পানিনিষ্কাশন হতে পারছে না। মানুষের এ সমস্যা দূর করতে ছাকলার গেট এলাকায় পানির সেচ মেশিন বসিয়ে পানি বেতনা নদীতে দেওয়া হচ্ছে ১৫ দিন ধরে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা দূর হতে দেরি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে খাল ও ঘেরমালিকদের দেওয়া অবৈধ নেট-পাটা অপসারণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কীভাবে পানিনিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে।