দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী কয়েকশ পণ্যবাহী গাড়ি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকে আছে। বৃহস্পতিবার সকালে যানবাহনের ট্রাকের এই লাইন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় বেইলি সেতু পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগ গাড়িই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আসা
যানবাহনচালক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি ও ঘাটের সংকটের কারণে এসব গাড়ি আটকে থাকছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে, অনেক দিন ধরে এই নৌপথে প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি এবং ঘাট কম। বর্তমানে এ নৌপথে ১০টি রো রো (বড়), ৬টি ইউটিলিটি (ছোট) এবং ১টি কে-টাইপ (মাঝারি) ফেরি রয়েছে। অধিকাংশ পুরোনো হওয়ায় মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি-দুটি ফেরি বিকল থাকে। যান্ত্রিক ত্রুটিতে বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে আছে ইউটিলিটি ফেরি শাপলা শালুক।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানান, দৌলতদিয়ার ৭টি ঘাট থাকলেও চালু রয়েছে মাত্র ৪টি। ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট তিন বছর আগে বর্ষায় ভাঙনের কবলে পড়ে। পরের বছর সংস্কার করে ঘাট ঠিক করলেও পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ রাখায় এবং পাটুরিয়া থেকে সরাসরি দৌলতদিয়ার ৫ অথবা ৭ নম্বর ঘাটে ভিড়তে সহজ হওয়ায় এই দুটি আজও ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ ছাড়া ইউটিলিটি ফেরির জন্য নির্মিত ৬ নম্বর ঘাটের সামনে পানি কম থাকায় প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বাকি চারটি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শিমুলিয়া এবং বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ওই রুটের অধিকাংশ গাড়ি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট ব্যবহার করছে। মাঝেমধ্যে রাতে কুয়াশায় ফেরি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এ কারণে প্রায়ই দৌলতদিয়া প্রান্তে ৫-৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের সারি তৈরি হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনচালক ও যাত্রীরা।
সাতক্ষীরা থেকে আসা ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক মামুন আকবর বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যার পর গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের কাছে আটকা পড়ি। এখন পর্যন্ত ফেরিঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পেছনে ফিড মিলের কাছে আটকে আছি। লাইনে আরও যে গাড়ি দেখছি তাতে মনে হয় নদী পাড়ি দিতে দুই দিন লেগে যাবে।’
পণ্যবাহী গাড়ি আটকে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কোম্পানির পার্সেলবাহী কাভার্ড ভ্যানসহ কিছু গাড়ি ভিআইপি সুবিধা নিয়ে আগেভাগেই পার হয়। আমরা ডান পাশের লাইনে সিরিয়ালে থাকি। যাঁরা নিয়মিত পেমেন্ট করেন, তাঁরা বাঁ পাশ দিয়ে বাসের সাথে চলে যাচ্ছেন।’
বুধবার সন্ধ্যায় যশোর থেকে রওনা করে রাত ১০টার দিকে গোয়ালন্দ ঘাটের কাছে যানবাহনের সারিতে আটকা পড়েন ট্রাকচালক আসাদুল আলম। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ালে থেকে সামনে একটু ফাঁকা পেলেই ঢুকে পড়ি। কয়েকবার লাইনের সামনে ঢুকে পড়ায় অনেকের চেয়ে আগেই ফেরিঘাটে পৌঁছাতে পেরেছি। এরপরও গোয়ালন্দ থেকে ঘাটে পৌঁছতে ১০ ঘন্টার মতো লেগেছে। এভাবে খেয়ে না খেয়ে গাড়িতেই বসে সময় পার করছি।’
দীর্ঘ এ যানযটের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মজিবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি ও ঘাটস্বল্পতা দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে এখনো ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সেই সঙ্গে অনেক অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি পার হচ্ছে। যে কারণে গাড়ির লম্বা লাইন হচ্ছে। তাঁর মতে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় পাঁচ শর মতো গাড়ি আটকে আছে।