দড়ি টেনে টেনে নদ পারাপার

প্রতিদিন দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার হয়ে কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।

সেতু না থাকায় এভাবেই দড়ি টেনে নৌকায় করে নদ পারাপার হতে হয়। সম্প্রতি জামালপুরের বকশীগঞ্জের ফকিরপাড়া নৌকা ঘাটে
প্রথম আলো

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের ভাটি কলকিহারা ও ফকিরপাড়া গ্রাম। এই দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পূর্ব পাশে ফকিরপাড়া গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), বাজার, পাকা সড়কসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

নদের পশ্চিম পাশে ভাটি কলকিহারা, দুর্গাপুর, মাইছানিরচর ও ফকিরপাড়া গ্রাম। ভাটি কলকিহারাসহ ওই চারটি গ্রামে কোনো উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ওইসব স্তরের শিক্ষার্থীদের দড়ি টেনে নৌকায় নদ পার হয়ে ফকিরপাড়া গ্রামে যেতে হয়। প্রতিদিন দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার হয়ে বকশীগঞ্জের সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজ, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মেরুরচর হাসেন আলী উচ্চবিদ্যালয় ও ফারাজিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে যেতে হয়। ওই চারটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে বাজারঘাট ও কেনাকাটা করার জন্য নৌকায় পার হয়ে বকশীগঞ্জ পৌর শহরে যেতে হয়। মেরুরচর ইউপিতে সেবা নিতেও তাঁদের নৌকায় দড়ি টেনে পারাপার হতে হয়। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

ওই নদের ওপর ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। সেটার অনুমোদন হলে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
মো. শামছুল হক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ফকিরপাড়া গ্রামের ঘাটে একটি নৌকা বাঁধা আছে। নৌকায় একজন নারী ও এক মাদ্রাসাছাত্র বসে আছে। আরও কয়েকজন যাত্রীর জন্য তারা অপেক্ষা করছে। কারণ, তাদের পক্ষে নৌকার দড়ি টেনে ২০০ মিটার নদ পার হওয়া সম্ভব নয়। নদের দুই পাড়ে বাঁশের খুঁটিতে লম্বা দড়ি টানানো। সেই দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার হতে হয়। এভাবেই প্রতিদিন নদটি তাদের পার হতে হয়।

সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাই দড়ি টেনে নৌকায় পারাপার হই। শুকনা মৌসুমে ভালোভাবেই পারাপার হওয়া যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নদে ব্যাপক স্রোত থাকে। ওই সময় নৌকা পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে এসে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রতিদিন এভাবেই শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে পারাপার হতে হয়।’

ভাটি কলকিহারা গ্রামের আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। একজন ব্যক্তিকে নাগরিক সেবা পেতে হলে, অবশ্যই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার হতে হয়। ব্যাপক ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু এই নদের কারণে সুফল পাচ্ছেন না কৃষকেরা। নৌকায় কৃষিপণ্য পারাপার করা যায় না। যেটুকু পারাপার করা যায়, সেখানেও পরিবহন খরচ অনেক। ফলে ফসল উৎপাদন করেও কৃষক লাভবান হচ্ছেন না। যদি এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়, ওইসব গ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে। জরুরি ভিত্তিতে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা উচিত।’

ভাটি কলকিহারা গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী বলেন, এই নদের কারণে ওইসব এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ওইসব গ্রামে। সরকারের নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। এই নদের কারণে বিশেষ করে যোগাযোগব্যবস্থা নেই। এখানে একটি সেতু নির্মাণে দাবি করেন তিনি।

মেরুরচর ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জানান, নদটি পরিষদ থেকে ওই চারটি গ্রামকে বিছিন্ন করেছে। পরিষদে আসতে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সমস্যা হয়। সেখানে একটি সেতু নির্মাণে পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামছুল হক বলেন, ওই নদের ওপর ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। সেটার অনুমোদন হলে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।