ধর্মপাশায় নামছে ঢলের পানি, ফসলডুবির শঙ্কা কমেছে
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় দুই দিন ধরে ঝলমলে রোদ উঠছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপও নেই। ধীরে ধীরে ঢলের পানি নামতে শুরু করেছে। নতুন করে আর ফসলডুবির ঘটনাও ঘটেনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাওরের বোরো ফসলডুবির শঙ্কাও কেটে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বোরো ফসল নিয়ে ধর্মপাশার কৃষকেরা আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪০০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে পাশের তাহিরপুর উপজেলার নজরখালী ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে ধর্মপাশা উপজেলার সীমানায় থাকা টাঙ্গুয়ার হাওরের ২২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত সোমবার রাতে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সানবাড়ী বাজারসংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীর পাড় উপচে পড়ে। এতে গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই নদীর দক্ষিণ পাশে থাকা কয়রানী হাওরে পানিতে ৩০ হেক্টর জমির আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে। একই দিন বিকেলে স্থানীয় কংস নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে ডোবাইল হাওরে ১৮৫ হেক্টর বোরো জমির আধা পাকা ধান পানিয়ে তলিয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গুরমা হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ওই হাওরের ১১৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিবের উদ্যোগে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক বাঁধ রক্ষার কাজ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অজয় কুমার তালুকদার (৪৯) বলেন, ‘দুই দিন ধইর্যা আবহাওয়াডা ভালা। কড়া রইদ উঠছে। ঢলের হানিও কমতাছে। অহন মনটায় জোর আইছে। অহন ভালায় ভালায় ধান কাইট্টা ঘরে তুলতাম।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলা উদ্দিন বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলেও ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনো পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। এবার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তদারকিতেও যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। তবে দুই দিন ধরে পাহাড়ি ঢলের পানির কমতে থাকায় কৃষকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন বলেন, বাঁধের কাজ সঠিকভাবে করা হয়েছে। তদারকিও যথেষ্ট ছিল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর বোরো জমির মধ্যে ৪৩৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ঢলের পানি নামছে। দুই দিন ধরে আবহাওয়া ভালো থাকায় ফসলডুবির আশঙ্কাও কেটে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে হাওরের পাকা ধান কাটা শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখানকার কৃষকেরা হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই হাওরের ফসল রক্ষায় উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।