ধর্ষণচেষ্টার শিকার তরুণীর বিষপানে মৃত্যুর মামলায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বিষপানের তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া লিপি খাতুন মারা যাওয়ায় ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম বাবুল মিয়া (৪০)। তিনি ধর্ষণের চেষ্টা করার পর লিপি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ করে পরিবার।
আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে বাবুল মিয়াকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের কান্দু সরকারের ছেলে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লিপি খাতুন। তিনি চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের কৈগাঁতী গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে। এ বছর লিপি জালশুকা হাবিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান।
গত মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন লিপি খাতুন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা ফজলুল হক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাবুল মিয়াকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিপি খাতুনকে প্রায় চার বছর ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন বাবুল মিয়া। এ বিষয়ে গ্রামের মাতবরদের কাছে বিচার চেয়েছিলেন ফজলুল হক। কিন্তু মাতবররা এ ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেননি। এদিকে বিচার চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন বাবুল মিয়া। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে পরিবারের লোকজনের কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে বাবুল ও তাঁর সহযোগী একই এলাকার রফিকুল ইসলাম লিপির ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লিপিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বাবুল মিয়া।
লিপির চিৎকার শুনে অন্য লোকজন ছুটে এলে বাবুল ও রফিকুল সটকে পড়েন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে ঘণ্টাখানেক পর লিপি বিষপান করেন। স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থায় অবনতি হলে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই লিপির বাবার করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। পরে আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেয়েকে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলেন ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে আমি বাবুলের হাত থেকে বাঁচাইতে পারলাম না। আর কারও মেয়েকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি বাবুলসহ ঘটনায় জড়িত সবার বিচার চাই।’
জানতে চাইলে কৈগাঁতী গ্রামের মাতবর আবদুল বারিক বলেন, ‘নালিশ পাওয়ার পর বাবলু মিয়াকে ডেকে শাসিয়েছিলাম। কিন্তু সে কাউবে মানে না। তাঁর কারণে মেয়েটি মারা গেল।’
থানা–হাজতে কথা হয় অভিযুক্ত আটক বাবলু মিয়ার সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ‘ফজলুল হকের বাড়ির দুই পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ঠিকাদারের আত্মীয় হিসেবে আমি ওই কাজের দেখাভালের দায়িত্বে ছিলাম। ফজলুল হকের বাড়ির কিছু জায়গা রাস্তার ভেতরে পড়েছে। ওই জায়গাটুকু ছেড়ে দিতে বলায় লিপি আমাকে গালাগাল করেছিল। এ ঘটনার বিচার চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে বিষপান করে। তাঁকে কুপ্রস্তাব দেওয়া বা উত্যক্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, লিপি খাতুন নামের ওই শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।