ধর্ষণচেষ্টা ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক পরিবার
রাজশাহীর চারঘাটে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও ঘটনার ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা করে বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। আসামিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে উল্টো দুটি ‘মিথ্যা মামলা’ করেছে। ভয়ভীতির কারণে তিন মাস ধরে পরিবারটি বাড়িতে থাকতে পারছে না।
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এই পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী তরুণী, তাঁর বাবা, মা, দাদি, ফুফাতো বোনসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বাবা কাস্টমস বিভাগের একজন উপপরিদর্শক।
সংবাদ সম্মেলনে তরুণীর বাবা বলেন, কলেজে আসা-যাওয়ার পথে গ্রামের বখাটে তরুণ জাফর আলী (২৮) তাঁর মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। রাজি না হওয়ায় নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হতো। বাধ্য হয়ে তিনি জাফরের পরিবারে অভিযোগ দেন। এতে জাফর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
গত বছরের ২৪ জুন কলেজছাত্রী প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন জাফর আলী ও তাঁর বন্ধু জীবন আলী, সাব্বির হোসেন, মো. রাতুল ও মো. লিখন দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁকে গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে সবাই ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আর ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এলে বখাটেরা বাড়ির জানালা ভেঙে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা চারঘাট থানায় গেলেও আসামিদের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি আসামিরা আদালতে হাজির হলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান। বর্তমানে আসামিরা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা অভিযোগ করেন, মামলা করার কারণে প্রধান আসামি আবু জাফরের শ্বশুর বাদী হয়ে একই দিনের (২৪ জুন) ঘটনা দেখিয়ে আদালতে নারী নির্যাতনের একটি মিথ্যা মামলা করেছেন। এতে তিনিসহ তাঁর তিন ভাই, বোনের মেয়ে ও তাঁর মামলার সাক্ষীর নাতিকে আসামি করা হয়। আবার গত ২৫ সেপ্টেম্বর মারধর করে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে তাঁকে প্রধান আসামি করে তাঁদের তিন ভাই, বোন ও বোনের ছেলেমেয়েকে আসামি করে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলায় ঘটনার যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় তিনি কর্মস্থলে ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর কার্যালয়ে হাজিরার কপি দেখান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এগুলো যাচাই না করেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে।
এরপর আসামিপক্ষ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তাঁদের হুমকি–ধমকি, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ জন্য তিন মাস ধরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে আট কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, আসামি জাফরের ভগ্নিপতি রুহুল আমিন এখন তাঁদের হুমকির ওপর রেখেছেন।
জানতে চাইলে প্রধান আসামি জাফর আলীর ভগ্নিপতি রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এ কথা ঠিক নয়, তাঁরা তাঁদের বাড়িতে থাকবেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ ব্যাপারে তাঁর কোনো ভূমিকা নেই। ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা জানেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিনও তিনি বাইরে কাজে ছিলেন। তিনি ভালো করে শোনেননি।
চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামিপক্ষ আদালতে মামলা করেছে। ভুক্তভোগী তরুণীর মামলা না নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়ের সঙ্গে প্রেমঘটিত ব্যাপার রয়েছে।