ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে ইউপি সদস্যের চাপ, নিরাপত্তা চেয়ে বাদীর আবেদন
নাটোরের বড়াইগ্রামে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে একজন ইউপি সদস্য ও তাঁর স্বামী বাদীকে চাপ দিচ্ছেন বলে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন পুলিশের কাছে।
বড়াইগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় এক কিশোরী (১৫) মায়ের সঙ্গে রাগ করে নানার বাড়ি যাওয়ার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ১৯ জুলাই মেয়েটির মা বাদী হয়ে শাহাদৎ হোসেন (২১) ও স্বপন মণ্ডলকে (২৪) আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন। পুলিশ তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের স্বজনেরা মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য জহুরা বেগম ও তাঁর স্বামীসহ কয়েকজনের শরণাপন্ন হন।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, ‘বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য জহুরা বেগম আসামিপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আমি এতে রাজি হইনি। তিনি ও তাঁর স্বামী জরিফ আলী নানাভাবে আমাদের চাপ দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার মারধর করেছেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমি আমার মেয়ের ওপর করা নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
তবে ইউপি সদস্য জহুরা বেগম বলেন, ‘ঘটনা মীমাংসা করার সময় মেয়ের মা-বাবাসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। তখন আমি ইউপি সদস্য ছিলাম না। টাকাটা সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক আলীর কাছে জমা আছে। মামলা শেষ হলে তাঁরা টাকা নিয়ে নেবেন।’
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক আলী বলেন, ‘আমি মীমাংসার মধ্যে ছিলাম না। এলাকার মেম্বার হওয়ায় বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষ মিলে আমার কাছে দুই লাখ টাকা জমা রেখেছিল। সেখান থেকে এক লাখ টাকা বর্তমান মেম্বার জহুরা বেগমের ছেলে সুজন আলী মামলার খরচা বাবদ আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। বাকি এক লাখ টাকা আমার কাছে আছে। উভয় পক্ষ এসে চাইলে ওই টাকা দিয়ে দেব।’
সাবেক ইউপি সদস্যের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য জহুরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মামলা ওঠানোর খরচা বাবদ কিছু টাকা নিয়েছিল বলে শুনেছি। তবে সে কিছুদিন আগে সৌদি আরবে চাকরি করতে গেছে। সে এলে টাকার হিসাব দেওয়া যাবে।’ দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা আইনের দৃষ্টিতে মীমাংসাযোগ্য নয়, তবুও জনপ্রতিনিধি হয়ে কেন তিনি মীমাংসার উদ্যোগ নিলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ কারণে তার অভিভাবকেরা আসামিদের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করেছে। আমরা শুধু এলাকার জনপ্রতিনিধি হওয়ায় আপস বাস্তবায়নে কিছুটা কাজ করেছি। এ ছাড়া মামলা তো আদালতে বিচারাধীন। আদালতেই সব সিদ্ধান্ত হবে।’
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, ‘মামলার বাদীকে মারধরের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’