কিশোরগঞ্জের ভৈরব ধানের মোকামে শুক্রবার ব্রি-২৮ ধান বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৮০ টাকা মণ। মোটা ধান গেছে ৭০০ টাকায়। গত বছরের এই সময়ে ব্রি-২৮ ধানের দর ছিল প্রতি মণ ৭৫০-৮০০ টাকা। ফলে বর্তমান দর নিয়ে মোটেও খুশি নন কৃষকেরা।
এদিকে কম দামে ধান পেয়েও তৃপ্ত হতে পারেননি ক্রেতারা। চিটা বেশি হওয়ায় এই দরে ধান কিনে লাভ করা কঠিন বলে মনে করছেন তাঁরা। কম কেনাবেচা নিয়ে ভালো নেই আড়তদারের মনও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একই সঙ্গে কৃষক, ব্যাপারী, খরিদদার ও আড়তদারের মন ভালো না থাকার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিরস্বর গ্রামের তোতা মিয়ার চালকলের সংখ্যা তিনটি। তিন দিন পরপর তাঁর প্রায় দুই হাজার মণ ধানের প্রয়োজন হয়। শুক্রবার তিনি ভৈরব মোকামে সর্বোচ্চ ৬৮০ টাকা দরে প্রায় ৫০০ মণ ধান কিনেছেন। ধানের দর কম হওয়ায় খুশি কি না, জানতে চাইলে তিনি না-সূচক উত্তর দিলেন। কারণ হিসেবে বললেন, আগে এক মণ ব্রি-২৮ ভাঙিয়ে ২২ কেজি চাল পাওয়া যেত। আর এখন ১৫ কেজির বেশি মিলছে না। এবার হাওরে এই ধানে চিটা হওয়ায় এমন গরমিল হচ্ছে।
তোতা মিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় ১ হাজার ৮০০ মণ ধান নিয়ে জামিল মাঝির একটি নৌকা ঘাটে নোঙর করে। নৌকাটি এসেছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের কদমচাল গ্রাম থেকে। এই নৌকায় যে কজন ব্যাপারীর ধান রয়েছে, তার মধ্যে করিম মিয়া একজন। আজকের বাজারদর জেনে করিম মিয়ার অস্থিরতা আরও বাড়ে। তিনি বলেন, প্রতি মণে ৪০ টাকা নেই।
জানা গেছে, কৃষকদের কাছ থেকে তাঁর ব্রি-২৮ কেনা দাম ৬৫০। প্রতি বস্তায় নৌকা খরচ ৩৫ টাকা আর অন্যান্য খরচ আরও ২৫ টাকা। এই দামে তাঁর পক্ষে আর মোকামে ধান পাঠানো সম্ভব হবে না।
ইটনার হাওর থেকে মোকামে ধান নিয়ে এসেছিলেন কৃষক সবুর মিয়া। মোকামের সড়কের এক পাশে গা হেলিয়ে বসেছিলেন তিনি। যতটা না শারীরিকভাবে ক্লান্ত, তার চেয়ে বেশি দুর্বল করে তুলেছে ধানের দর। সবুর মিয়া বলেন, চিটার কারণে এমনিতেই এবার কম ধান পাওয়া গেছে, আবার এখন দাম কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাধীনতা-পূর্ব থেকে হাওরাঞ্চলের, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন; নেত্রকোনার খালিয়াজুরি; হবিগঞ্জের দিরাই, লাখাই, আজমিরিগঞ্জ; সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কিছু অংশের ধান কেনাবেচা চলে ভৈরব মোকামে। এখানকার ধান যায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, লালমনিরহাট, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ব্যবসায়ী ও মিলারদের কাছে।
এবার ভৈরব মোকামে নতুন ধানের আমদানি শুরু হয় ৭ এপ্রিল। এবার হাওরে ব্রি-২৮ ধানে চিটা হয়েছে। ফলে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। আবার উৎপাদিত ধানের পুষ্টতাও কম। ফলে শুরু থেকেই এই মোকামে ব্রি-২৮ ধানের দাম ৭০০ টাকার ওপরে যাচ্ছে না। মোটা ধানের দর ৭০০ টাকার মধ্যে। মোটা ধানের দরও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা কম।
শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মোকামে নীরবতা। ঘাটে ধানবোঝাই নৌকা মাত্র পাঁচটি। ব্যবসায়ীরা জানান, এরই মধ্যে হাওরে ব্রি-২৮ ধানের ৮০ ভাগ কাটা শেষ। কিন্তু এখনো ভৈরব মোকামে আমদানি বাড়েনি। ফলন কম হওয়ায় এবং একই সঙ্গে দাম না পাওয়ায় মোকামে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তপ্ত রোদে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে মাহাবুব মিয়া নামের এক আড়তদার কেনাবেচার হিসাব মেলানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতি আড়তদারদের অনুকূলে নেই। তাঁদের কমিশন ব্যবসা। যত আমদানি, তত ব্যবসা। এখন মোকামে আমদানি নেই; সুতরাং দাম কম হলেও ব্যবসা তাঁদের পক্ষে নেই।