নদীর স্রোতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় যে যন্ত্রে

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিং’–এ লিডিং ইউনিভার্সিটির স্টলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ‘টাইডাল এনার্জি কনভার্সেশন মডেল’
ছবি: প্রথম আলো

লোহার তৈরি মাঝারি আকৃতির একটি বাক্স। ওই বাক্সের মাঝখানে আবার লোহার কয়েকটি শিট বাঁকিয়ে রাখা। দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির ফ্যানের মতো। ওই বাক্সের ওপরে একটি মোটর লাগানো। মোটরের পাশে একটি বৈদ্যুতিক বাতি। সিলিন্ডার আকৃতির ফ্যান ও মোটর একটি ফিতা দিয়ে যুক্ত। ফ্যানটি ঘোরালে বাতি জ্বলে ওঠে। নদীর স্রোত দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এমনই একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে টাইডাল এনার্জি কনভারসেশন মডেল। মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে সিলেট বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিংয়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে যন্ত্রটি। এটি উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ছাত্র সাকলাইন দেওয়ান বলেন, গত এপ্রিলে যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সিলেটে বহমান নদীগুলোর পানির স্রোত কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ওই যন্ত্র দিয়ে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এক কিলোওয়াট দিয়ে ১২ ভোল্টের প্রায় পাঁচ থেকে সাতটি ফ্যান চালানো যাবে। সঙ্গে বাতিও জ্বালানো যাবে কয়েকটি।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিং’ অনুষ্ঠানে ৩০টি স্টলে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্যোগে উদ্ভাবিত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। এই প্রদর্শনী সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে উদ্ভাবিত সরঞ্জাম দেখছিলেন সাধারণ লোকজন।

জেলা পরিষদের জয় পিসি নামের ডিজিটাল বোর্ডে আনমনে ছবি আঁকছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুমিত দাশ। সে নগরের সরষপুর এলাকার বাসিন্দা। স্কুল শেষ করে একাই বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিং অনুষ্ঠানে এসেছে । প্রদর্শনী দেখতে এসে বোর্ডটি দেখে ছবি আঁকছে বলে জানায় সুমিত।

সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অটোমেশন অব সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্ভাবন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রিফাত খান বলেন, এ পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবেদনের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে কাগজে লিখে আবেদন করতে হবে না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আবেদন করতে হবে না। তাঁরা ওই ওয়েবসাইটে নিজেদের প্রোফাইল আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। সেটি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমোদনের পর অনলাইন থেকেই শিক্ষার্থীরা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও সেটি একই ধরনের কাজ করবে। এ ছাড়া ওই ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। যাতে নিজেদের আইডি, পাসওয়ার্ড দিলেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিত বা অনুপস্থিতির বিষয়টি চলে আসবে। টানা কয়েক দিন অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকদের কাছে খুদে বার্তা চলে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের প্রধান পরিতোষ মোদক বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে উপবৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনকার উপস্থিতিও মনিটরিং করা হবে। যাতে পরবর্তী সময়ে উপস্থিতির হার পুনরায় পর্যালোচনা করার ঝামেলায় পড়তে হবে না।

বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিং অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা পুলিশ, মহানগর পুলিশ, পল্লী বিদ্যুৎ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের স্টল রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ মোমেনা মণি, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. জাকারিয়া, জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।