নদী-খালে পানি নেই, সংকটে তরমুজচাষিরা

খুলনার দাকোপ উপজেলায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে কৃষকের লাভের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে সেচের পানির অভাবে। ফলন কমার পাশাপাশি তরমুজের গাছ মরে যাওয়ারই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পানির উৎস খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় এবং গত কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের চাষ হয়। এর মধ্যে জেলার উৎপাদিত তরমুজের ৭০-৭৫ শতাংশই দাকোপের। গত বছর এই উপজেলায় ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এবার ৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আইলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের অনেক জায়গায় এবার প্রথমবারের মতো তরমুজের আবাদ হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তরমুজ এখানকার কৃষকের প্রধান ফসল। প্রতি বিঘায় আমন ধান উৎপাদনে ৮–১০ হাজার টাকা খরচ হয়, সময় লাগে ৫ মাস। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সেখানে তরমুজের বীজ বোনা থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ তিন মাস। বিঘায় খরচ হয় ১২–১৪ হাজার টাকা। বিঘায় বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা। লাভ বেশি হওয়ায় তরমুজের আবাদ বেড়েছে।

গত ২৯ ও ৩০ মার্চ দাকোপের অন্তত ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির তরমুজগাছ বড় হয়ে গেছে। গাছে ফুল ও গুটি আসা শুরু করেছে। কিছু খেতে তরমুজ বড় হয়েছে। পানি, সার ও কীটনাশক ছিটানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। তবে সেচের পানির তীব্র সংকট। প্রচণ্ড তাপে এবং দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠের ভেতরের খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। অনেকে ছোট ছোট কুয়ো কেটে প্রথম দিকে সেখান থেকে সেচ দিয়েছেন। কিন্তু সে পানির আধারগুলোতেও এখন পানি শুকিয়ে গেছে। অনেক কৃষক দূরের নদী থেকে পাম্প ও পাইপের মাধ্যমে খেতে পানি দিচ্ছেন। সে নদীতেও পানি এক ফুটের নিচে।

দাকোপ ইউনিয়নের কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের স্বপন মণ্ডল বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন, কিন্তু পানি নেই। যদি বৃষ্টি হয়, তবে গাছ বাঁচবে। পাশের কাঁকড়াবুনিয়া, কালীতলা খালেও একদমই পানি নেই। কয়েক বছর ধরে খালগুলোতে চরা (অগভীর) পড়ে আছে। খনন করা হয় না। এলাকার প্রায় চার হাজার কৃষক পানি পাচ্ছেন না।

রাসখোলা গ্রামের নিরাপদ রপ্তান একটি মগে করে গাছে অল্প করে পানি দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘১২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। লাখ টাকার ওপর খরচ হয়ে গেছে। পানির অভাবে এর মধ্যেই তিনটা খেত মরে গেছে। অন্যটিতেও গাছ মরা শুরু করেছে। খাল, মাঠ সব শুকনা। এবার প্রচুর পরিমাণে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এ জন্য পানির সংকট আরও বেড়েছে।’

দাকোপে প্রথম তরমুজ চাষ হয় পশ্চিম বাজুয়া এলাকায়। ওই এলাকায় এবার পানির তীব্র সংকট। সেখানে কচা ও ভাইজুড়ি খালে শত শত পাম্প মেশিন বসানো। সেখান থেকে কোনোমতে পানি তোলা হচ্ছে। কৃষকেরা কাদা তুলে একটু গর্ত করছেন, আর সেই পানি তুলছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, বৃষ্টি না হলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তরমুজখেতে পানি দেওয়ার জন্য কোনো পানি থাকবে না। বিএডিসিকে ১০২টি খাল খননের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা কিছু খননকাজ শুরু করেছে। স্থানীয় সমস্যার কারণে কিছু খনন করা যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সব খাল খনন করা গেলে সমস্যা কমবে।