নবজাতককে কোলে নিয়ে কাঁদছেন পরিবারের সবাই
সাবিনা ইয়াসমিনের কোলজুড়ে এসেছে সন্তান। নতুন সদস্যের আগমনে পরিবারের সবার খুশি থাকার কথা। তবে এখানে খুশির মধ্যেও রয়েছে বেদনা। নবজাতককে কোলে নিয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের সবার মন খারাপের কারণ নবজাতকের বাবা শাকিল খান (২৬)। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৩৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত ২২ মার্চ মৃত্যু হয় তাঁর। গতকাল শনিবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় জন্ম হয় কন্যাশিশুটির।
শাকিলের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী জিন্নাতুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটিকে কোলে নিয়ে কাঁদেনি এমন কেউ নেই। সবার মুখে একটাই কথা, আর কয়েক দিন বেঁচে থাকলে সন্তান জন্মের কথা জেনে যেতে পারতেন শাকিল।’
দুই বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে শাকিল ছিলেন দ্বিতীয়। স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে সংসার শুরু করেন ২০২০ সালে। রাজধানী ঢাকায় ভগ্নিপতি মোস্তাফিজুর রহমানের রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে। সেখানে কাজে সহায়তা করতেন শাকিল। তবে মাস কয়েক আগে থেকে কলাপাড়ার সবুজবাগ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন তিনি।
শাকিলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কলাপাড়ার বালিয়াতলী এলাকায় মহিষ বহনকারী একটি টমটমের সঙ্গে শাকিলের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শাকিল। পেছনে ছিলেন শ্যালক ইমাম মাতব্বর। দুর্ঘটনায় ইমাম সামান্য আহত হন।
শাকিলকে নিয়ে সেদিন রাতেই রাজধানীর পথে রওনা দেন স্বজনেরা। চিকিৎসকেরা জানান, দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পায়ের হাড় বেশ কয়েক টুকরা হয়ে গেছে। পাঁজরের হাড় কয়েক জায়গায় ভাঙা। পেট, কিডনি ও ফুসফুসেও গুরুতর আঘাত লেগেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল ক্ষত।
দুর্ঘটনার পরের দিন ভোরে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শাকিলকে। সেখানে পেটে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত) নেওয়া হয়। তবে সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) অন্যান্য সেবার সংকটের কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়।
পরে স্বজনেরা শাকিলকে ধানমন্ডির বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। পেটে ও পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। একপর্যায়ে বাঁ পায়ে সংক্রমণ দেখা দিলে ১৭ মার্চ তা কেটে বাদ দেওয়া হয়।
শাকিলের ভগ্নিপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শাকিল বাঁচার জন্য খুব আকুতি করছিলেন। বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করা হয়েছিল। করোনাকালে শাকিল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। হাসপাতালেও তিনি সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন।
শাকিলের স্ত্রী সাবিনা ও নবজাতক সন্তান সুস্থ আছেন বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বেসরকারি একটি ক্লিনিকে সন্তান জন্মের পর মা ও মেয়েকে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল সোমবার তাঁদের বাড়িতে নেওয়া হবে।
পরিবারের সদস্যরা নবজাতকের জন্য ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে হাসপাতালে এসেছেন বলে জানান শাকিলের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী জিন্নাতুন নাহার। তিনি বলেন, ‘সবার ভালোবাসায় বাচ্চাটা যেন বড় হতে পারে, সেই দোয়া করবেন।’