কাঁচপুরে দুটি ডাম্পিং স্টেশন
নষ্ট হচ্ছে কয়েক শ যান
মতিঝিল ও ওয়ারী জোন এলাকার জব্দ যান কাঁচপুরের একটি ডাম্পিং স্টেশনে এবং কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের জব্দ যান অপর ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়।
খোলা আকাশের নিচে অযত্ন, অবহেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে পুলিশের দুটি ডাম্পিং স্টেশনে নষ্ট হচ্ছে কয়েক শ যানবাহন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাইসেন্সবিহীন, চোরাই, দুর্ঘটনাকবলিত, মাদক বহনকারী যানবাহন, অবৈধ মালপত্রসহ বিভিন্ন কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব যানবাহন জব্দ করে, সেগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের নির্ধারিত ডাম্পিংয়ে রাখা হয়। ঢাকা মহানগরের মতিঝিল ও ওয়ারী জোন এলাকার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন থানা ও ট্রাফিক বিভাগে জব্দ করা যানবাহন সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের একটি ডাম্পিং স্টেশনে এবং কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের জব্দ করা বিভিন্ন যানবাহন অপর একটি ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়।
গত বৃহস্পতিবার দুটি ডাম্পিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ডাম্পিংয়ের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে আছে রিকশা, অটোরিকশা, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ কয়েক হাজার যানবাহন। যানবাহনের মধ্যে সাধারণ রিকশার সংখ্যাই বেশি। বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় যানবাহনগুলোর ওপর লতাপাতা গজিয়েছে। প্রতিটি যানবাহনে মরিচা ধরেছে। অনেক যানবাহনের যন্ত্রাংশ, ব্যাটারিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে।
ডাম্পিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। এ কারণে ওই সব যানবাহন নষ্ট হচ্ছে।মনিরুজ্জামান, ওসি, কাঁচপুর হাইওয়ে থানা
ডাম্পিং স্টেশনের সামনে দেখা হয়, ঢাকার মীরহাজীরবাগ এলাকার রিকশাচালক নোয়াব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় দুই বছর আগে আমার রিকশাটি পুলিশ ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে আসে। বর্তমানে আমার রিকশার খাঁচা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই, সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। পুলিশের হাতে–পায়ে ধরেও আমার একমাত্র সম্বল গাড়িটি ফেরত নিতে পারছি না।’
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অটোরিকশাচালক সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমার গাড়িটি চার মাস আগে পুলিশ ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যায়। বর্তমানে গাড়ির ইঞ্জিন, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। পুলিশের সোর্স এসব যন্ত্রাংশ চুরি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।’
ঢাকা মহানগরের মতিঝিল ও ওয়ারী জোনের যেসব যানবাহন ডাম্পিংয়ে রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাজারবাগ রিজার্ভ পুলিশের এএসআই মো. হাসান মিয়া বলেন, ‘তিন আনসার সদস্যকে নিয়ে আমি এ ডাম্পিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছি। লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এবং মামলার কারণে বিভিন্ন যানবাহন এখানে রাখা হয়। আদালতের অনুমতি পেলে ডাম্পিংয়ে থাকা যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালত থেকে অনুমতিপত্র আনতে না পারায় শত শত যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশনের ভেতরে আমরা নিজেরাও পুরোনো ভাঙা একটি ঘরে বসবাস করছি।’
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ডাম্পিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। এ কারণে ওই সব যানবাহন নষ্ট হচ্ছে।