নাটোরের সাংসদ শফিকুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জিডি
নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সরকার সুজিত কুমার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। গত ২৯ জুলাই রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানায় তিনি এ জিডি করেন।
সরকার সুজিত কুমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক। বর্তমানে তিনি ওই বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সপরিবার রাজশাহী নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কুমারপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন।
ওই শিক্ষকের বইয়ে সাংসদ শফিকুল ইসলামের বাবা হাসান আলী সরদারকে রাজাকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বইয়ের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
বইয়ের লেখক সরকার সুজিত কুমার আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ শফিকুল একজন সন্ত্রাসী। তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর (শিক্ষক) বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছেন, তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ জন্য তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। তিনি রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
জিডিতে সরকার সুজিত কুমার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি চারটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে একটি নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর ২০১০ সালে গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালের বইমেলায় বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ওই গ্রন্থের প্রথম প্রকাশের ৩১০ পৃষ্ঠায়, প্রথম সংস্করণের ৩৬১ পৃষ্ঠায় এবং দ্বিতীয় সংস্করণের ৬০০ পৃষ্ঠায় ‘রাজাকার’ হাসান আলী সরদারের নাম মুদ্রিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মাঠপর্যায়ে তিন বছর যোগাযোগ করে নাটোর জেলার গ্রামেগঞ্জে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে ও ছবি তুলে গ্রন্থে অসংখ্য তথ্য সন্নিবেশ করেন। সাক্ষাৎকারদাতারা যদি ভুল তথ্য দিয়েও থাকেন, সে বিষয়ে তিনি যাচাই–বাছাই করেন। একাধিক সাক্ষাৎকারদাতা নাটোর কান্দিভিটার (পুরোনো কোর্টপাড়ার) হাসান আলী সরদার মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন ‘রাজাকার’ ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন। তিনি তাঁদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী গ্রন্থে নাম সংযোজন করেন। তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে পারেন না। তাই তিনি হাসান আলী সরদারের নাম গ্রন্থে মুদ্রণ করেন।
সরকার সুজিত কুমার আরও বলেন, বর্তমানে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ও ভিন্নমত সৃষ্টি হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁর গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে সাংসদ শফিকুল ইসলামের বাবার স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এতে সাংসদ শফিকুল তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে হুমকি দিয়েছেন। সাংসদ বলেন, নাটোরের কিছু নেতা লেখককে (সরকার সুজিত কুমার) টাকা দিয়ে এ মিথ্যাচার করেছেন।
জিডিতে সরকার সুজিত কুমার বলেন, ২০০৯ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হলেও তখন সাংসদ ও তাঁর পরিবারের তরফ থেকে কোনো প্রতিবাদ ও লেখকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা বা হুমকি দেওয়া হয়নি। তিনি জিডিতে দাবি করেন, তিনি সাংসদ শফিকুলকে কখনো দেখেননি। এ ছাড়া হাসান আলী যে সাংসদের বাবা, তা–ও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তাঁর অজানা ছিল।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে সাংসদ শফিকুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কিছু অপরিচিত সন্ত্রাসী তাঁকে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন।
সরকার সুজিত কুমার তাঁর জিডিতে বলেন, তিনি একজন নিরস্ত্র শিক্ষক। তাই এ ধরনের হুমকির জন্য ভীতসন্ত্রস্ত। তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জিডিতে তিনি তাঁর ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের ওপর কোনো আক্রমণ হলে সাংসদ শফিকুল ও তাঁর বাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে দিতে বাধ্য হবেন।
এ ব্যাপারে সাংসদ শফিকুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।