নাটোরে সম্মেলনের আগের দিন আ.লীগ নেতার শোভাযাত্রায় হামলা
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপকমিটির সদস্য এমরান সোনারের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়নের পিরজিপাড়া মাদ্রাসা মোড়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
এমরান সোনারের অভিযোগ, হরিশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ওরফে কালিয়া ও তাঁর লোকজন এ হামলা করেছেন। অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গণি ভূঁইয়ার ছেলে।
হামলার ঘটনায় এমরান সোনারের সমর্থক আফতাব হোসেন (৩১), জিয়ারুল ইসলাম (২০), আহম্মদ হোসেন (৭০), সুলতান মিয়া (৩৫), আসাদুল ইসলাম (২৫) ও রেজিয়া বেগম (৫০) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এমরান সোনারের ভাষ্য, সম্মেলন উপলক্ষে আজ দুপুরে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রাটি হরিশপুর ইউনিয়নের পিরজিপাড়া মাদ্রাসা মোড়ে পৌঁছালে শফিকুল ইসলাম তাঁর দলবল নিয়ে হামলা করেন। এ সময় হামলাকারীদের হাঁসুয়া, চাকু ও লাঠির আঘাতে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা আহত হন। এ সময় গুরুতর আহত ছয়জনকে স্থানীয়দের সহায়তায় নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) মঞ্জুরুল আলম বলেন, তাঁদের মধ্যে আফতাব হোসেনের মাথায়, জিয়ারুল ইসলামের পেটে, সুলতান মিয়ার হাতে ও রোজিনা বেগমের পিঠে কাটা জখম আছে।
এমরান সোনারের ভাই রাকিবুল সোনার বলেন, হামলার সময় তাঁদের নেতা–কর্মীরা মোটরসাইকেল থামিয়ে আহত আহম্মদ হোসেনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে ওই বাড়ির লোকজনও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
তবে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বা তাঁর সমর্থকেরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলেও ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনছুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আহত ব্যক্তিরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাত পোহালেই সম্মেলন
সাত বছর পর আগামীকাল রোববার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শহরের বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সম্মেলন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হবেন, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।
আগামীকালের সম্মেলনে পুরো জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার নেতা–কর্মী সমবেত হবেন বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। এ ছাড়া তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন নেতা সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলন উপলক্ষে নেতাদের মধ্যে প্রচার–প্রচারণায় তীব্র প্রতিযোগিতাও চলছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের ব্যানার খোলা নিয়ে গত দুই দিন সদরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে এমরান সোনারের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় উত্তেজনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
শীর্ষ পদ নিয়ে জল্পনা–কল্পনা
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারা হবেন, তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যাপক জল্পনা–কল্পনা চলছে। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের পাশাপাশি সহসভাপতি আবুল কালাম, সিরাজুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনিছুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শফিকুল ইসলামসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক শেখ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামের নাম সম্ভাব্য তালিকায় আছে। তবে এই দুটি পদে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হচ্ছে না বলে ধারণা করছেন স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, কেন্দ্র থেকে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। এমনকি সেটাও সম্মেলনস্থলে ঘোষণা করা হবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে সম্মেলনের শেষ শেষ মুহূর্তেও নাটোর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দুই জোটে বিভক্ত হয়েছেন। এক জোটে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩–এর সাংসদ জুনাইদ আহ্মেদ, নাটোর-৪–এর সাংসদ আবদুল কুদ্দুস, নাটোর-১–এর সাংসদ শহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত নারী সাংসদ রত্না আহমেদ, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক শেখ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম। অন্য জোটে রয়েছেন নাটোর-২–এর সাংসদ শফিকুল ইসলাম ও নাটোর-১–এর সাবেক সাংসদ আবুল কালাম।
আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার ব্যাপারেই খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি দুর্নীতিবাজদের কমিটিতে নিয়ে আসবেন না।
এদিকে শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কখনোই নৌকার সঙ্গে বেইমানি করিনি। নৌকার সঙ্গে যাঁরা বেইমানি করেছেন, দলের প্রধান নেতা (প্রধানমন্ত্রী) তাঁদের নেতা করবেন না।
ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনিছুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা এমন ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বসাবেন, যাঁরা জেলার সব নেতা–কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে শক্তিশালী করতে পারবেন।