নাটোরে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে তিন ভাইয়ের মৃত্যু

শরিফুল ইসলাম ওরফে পচু
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে তিন সহোদরের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং অন্যজন এক ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হচ্ছেন নাটোর শহরের ঐতিহ্যবাহী পচুর হোটেলের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম ওরফে পচু (৫৬), তাঁর বড় ভাই মো. বাবলু (৭০) ও ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৪৬)।

পচুর হোটেল সূত্রে জানা যায়, হোটেলটির স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম ওরফে পচু গত রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে সেবা করার জন্য হাসপাতালে থাকা ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলমও করোনা সংক্রমিত হয়ে বুধবার একই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে শরিফুল ইসলামকেও আইসিইউতে নেওয়া হয়। শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে মেজ ভাই শরিফুল ইসলাম মারা যান।

ভোর চারটার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই বড় ভাই মো. বাবলু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। জুমার নামাজের পর শহরের ভবানীগঞ্জের কবরস্থানে দুই ভাইয়ের দাফন অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলমেরও মৃত্যু হয়।

মো. বাবলু, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ মহল্লার মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। তাঁদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

সাহারা চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মালিক গোলাম সারোয়ার জানান, পচুর হোটেলের সুনাম দেশজুড়ে। নাটোরে এসে দেশীয় খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়লে অধিকাংশ মানুষ তাঁর হোটেলে খাবার খান। অমায়িক নির্লোভ এই ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে সবাই ব্যথিত।

শহরের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, শহরের চকরামপুর এলাকায় গীতি সিনেমা হলের পাশে প্রায় চার দশক আগে শরিফুল ইসলাম পচুর হোটেল নামে ক্ষুদ্র পরিসরে খাবার হোটেল চালু করেন। তাঁর সততা, দক্ষতা ও ভালো রান্নার গুণে পচুর হোটেলের সুনাম দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

শরিফুল ইসলামের ছেলে ও পচুর হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিটন জানান, তাঁর বাবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়াতেন। এ কারণে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে মেজ ভাই সহ্য করতে পারেননি। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত তিনি তাৎক্ষণিক মারা যান। তিনি বলেন, ‘এক এক করে এক দিনে আমরা আমাদের তিন আপনজনকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তবে আমি আমার বাবার নিজ হাতে গড়ে তোলা স্বনামধন্য পচুর হোটেলটি চালু রাখব।’