নানা আয়োজনে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আজ সোমবার নানা আয়োজনে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে’ মিলাদ ও দোয়া, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এই সুরসম্রাট উপমহাদেশে রাগসংগীতের প্রচার ও প্রসারে কাজ করেন। অথচ তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে গত পাঁচ বছরে দুবার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর হাতের লেখা ২৫টি চিঠি, বেহালা, সরোদ, জায়নামাজ, রেওয়াজের ২টি গালিচাসহ সব স্মৃতিচিহ্ন। তবে আশার কথা হলো, ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সংগীতাঙ্গনটি।

১৮৬২ সালের এপ্রিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে সংগীত পরিবারে আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম। বাবা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ। ১৯৭২ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের মধ্যপ্রদেশে মারা যান। ৮ বছর বয়সে সংগীতচর্চা শুরু করা এই সুরসাধক ১১০ বছর বেঁচে ছিলেন। তবে তাঁর জন্মভিটা নবীনগরে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো আয়োজন করা হয়নি।

সংগীতাঙ্গন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল আটটায় সংগীতাঙ্গনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পরে সংগীতাঙ্গনের নবপ্রতিষ্ঠিত আলাউদ্দিন খাঁর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সংগীতাঙ্গন মিলনায়তনের সরোধমঞ্চে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

১৯৫৬ সালে আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতের নানা যন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাসের জন্য পুরাতন জেল রোডের বাড়িটি কেনেন। সেই বাড়িই এখন সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন। সেখানে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি জাদুঘর। এই সংগীতাঙ্গনে গান শেখানোর পাশাপাশি যন্ত্রসংগীত, চিত্রাঙ্কন ও নৃত্যকলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সংগীতাঙ্গন সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সে সময় জাদুঘরে রাখা আলাউদ্দিন খাঁর ব্যবহৃত ২টি সরোদ, ২টি বেহালা, ১টি সন্তুর, ১টি ব্যাঞ্জো ও ১টি সারেঙ্গী, তাঁর হাতে লেখা অন্তত ২৫টি চিঠি, হজের সময় সৌদি আরবের বাদশাহর দেওয়া জায়নামাজ, তাঁর নিজের ১টি বড় ছবি, দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়কসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তোলা অন্তত ১ হাজার আলোকচিত্র ও আলোকচিত্রের অনুলিপি আগুনে পুড়ে যায়। ওই ঘটনার পর সংগীতাঙ্গনের ভেতরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ গবেষক ও সংগীতাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১০২ বছর সংগীত চর্চা করেছেন। কিন্তু তাঁর সংগীতাঙ্গনে ২০১৬ ও ২০২১ সালে দুই দফায় হামলা হয়েছে। হামলায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সব স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে আলাউদ্দিন খাঁর ব্যবহৃত একটি ট্রাংক ও দুটি তবলা আছে। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।