নান্দাইলের দুই ইউপিতে আ.লীগের বৈধ প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে নাটকীয়তা
অনেক নাটকীয়তা ও সময়ক্ষেপণের পর ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ও রাজগাতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। কারণ, ওই দুই ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দাবি করে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় যাচাই-বাছাইয়ের পর অপর দুজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও চণ্ডীপাশা ও রাজগাতী দুই ইউনিয়নের বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত না হওয়ায় নেতা-কর্মীরা কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। পরে রাত নয়টার দিকে বৈধ দুই প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। ওই দুজন হলেন চণ্ডীপাশা ইউপিতে মো. ইফতেখার হোসেন ও রাজগাতী ইউপিতে আবদুর রউফ। আর যাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা হলেন চণ্ডীপাশায় মো. এমদাদুল হক ভূঁইয়া ও রাজগাতী ইউপিতে মো. সাহাদত হোসেন ওরফে টুটন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান। অন্যটি একই দলের সাবেক সাংসদ মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। বাদ পড়া দুই প্রার্থী সালাম পক্ষের নেতা। এ পক্ষের লোকজন এ ঘটনার জন্য দলেরে একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে দায়ী করেছেন। আর যাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে, তাঁরা বর্তমান সাংসদের পক্ষের নেতা।
তবে যে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের পক্ষের লোকজনের অভিযোগ, প্রার্থিতা বাতিলের কারণ তাঁদের জানানো হয়নি। এমনকি নির্দিষ্ট সময় (বিকেল পাঁচটা) পর থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারেননি।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফখরুজ্জামানের ওই দুজনের প্রার্থিতা বাতিলের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাঁদের মনোনীত করেছে, তাঁদের মনোনয়নপত্রই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাদ পড়া প্রার্থীরা সংক্ষুব্ধ হলে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা বলেন, ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা থেকে নান্দাইল উপজেলার ১১টি ইউপির চেয়ারম্যান পদের জন্য ১১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে চণ্ডীপাশা ইউপির প্রার্থী হিসেবে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক ভূঁইয়া ও রাজগাতী ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাহাদত হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে সাহাদত হোসেন ৮ ডিসেম্বর ও এমদাদুল হক ভূঁইয়া শেষ দিন, অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর চণ্ডীপাশা ও রাজগাতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে। চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে মো. ইফতেখার হোসেন ও রাজগাতী ইউনিয়নে আবদুর রউফকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে দলটি। প্রার্থী পরিবর্তনের চিঠিতে ৮ ডিসেম্বর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেন। ওই দুই প্রার্থী এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ফলে দলীয় প্রার্থী আসলে কারা, তা নিয়ে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চণ্ডীপাশা ইউপি থেকে প্রথমে আওয়ামী লীগেরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া এমদাদুল হক ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে তাঁর ভাই আজিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে রাজগাতী ইউপিতে প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহাদত হোসেনের পক্ষের লোকজন একই কথা বলেছেন।